• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

টেকনিশিয়ানদের নিরাপত্তা ‘মিথ’; প্রশ্ন অনেক, উত্তর নেই

কলকাতার সিনে এন্ড ভিডিও হেয়ার স্টাইলার অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে একটা ভিজ্যুয়াল বার্তা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে।

অতনু রায়: কলকাতার সিনে এন্ড ভিডিও হেয়ার স্টাইলার অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে একটা ভিজ্যুয়াল বার্তা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন জানান যে ফেডারেশনের সঙ্গে তাঁদের যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল, তা এখন অতীত। শোনা যায়, তনুশ্রী বলছেন যে তাঁর একটা সিদ্ধান্ত সংগঠনের অনেক ক্ষতির কারণ হয়েছে তবে ফেডারেশন সভাপতি পাশে ছিলেন বলে মিটমাট সম্ভব হয়েছে। সিনে এন্ড ভিডিও হেয়ার স্টাইলার অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ সীমা ঘোষ বলেন সমগ্র পরিস্থিতি সামাল দিতে অ্যাসোসিয়েশনের সঞ্চিত অর্থের অনেকটাই খরচা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদিকা জয়শ্রী দাস বলছেন, কুচক্রে পড়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল তনুশ্রী, তবে তার আবার মূল স্রোতে ফিরে আসার কৃতিত্ব ফেডারেশনের।

প্রসঙ্গত, বছরখানেক আগে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তনুশ্রী দাস আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করে শিরোনামে উঠে আসেন। আরজি কর ঘটনার মাসখানেকের মধ্যেই এই ঘটনা অন্যরকমের বিতর্ক তৈরি করে। গিল্ড ও ফেডারেশনের বিরুদ্ধে থ্রেট কালচারের অভিযোগ আনেন তনুশ্রী। সেই সময়ে ঘোলা জলে মাছ ধরে কিছু মানুষ রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টাও করেন। মামলা করেন তনুশ্রী। অবশেষে ১৪ মাস পরে সেই মামলা থেকে সকলের মুক্তি হল।

Advertisement

তবে কি থ্রেট কালচারই জিতল দিনের শেষে? তনুশ্রীকে ফোন করায় তাঁর উত্তর, “ভুলটা আমারই ছিল। আমি শুরুতেই যদি বিষয়টা নিয়ে ফেডারেশন সভাপতির সঙ্গে কথা বলে নিতাম তাহলে এতটা সমস্যা হত না। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আমাদের গিল্ডের সঙ্গে কথা বলেই ব্যাপারটা মিটিয়ে নেব। সেটা না হওয়াতেই সমস্যাটা দীর্ঘস্থায়ী হল। তবে এই মুহূর্তে আর কোনো মন কষাকষি নেই। আশা করি, অল্প দিনের মধ্যে কাজও শুরু হবে। তবে যে হাউসগুলোয় আমি কাজ করতাম তারা তো আমার জন্য বসে থাকবে না। তাই আমাকে আবার শুরু থেকেই শুরু করতে হবে।”

Advertisement

কত খরচা হয়েছে? ফেডারেশনের থেকে কিছু সহযোগিতা পেলেন? কোষাধ্যক্ষ সীমা ঘোষ বললেন, “প্রায় ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেছে। ফেডারেশন প্রায় ৫০ শতাংশ টাকা খরচ করেছে। ফেডারেশন আমাদের পাশে সবসময়ই ছিল।”

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতেই হয়, সম্প্রতি একটি টেলিভিশন সিরিয়ালের শুটিং চলাকালীন কাজ করতে করতে একজন কারপেন্টার পড়ে যান। এই দুর্ঘটনার ফলে তাঁর ফিমার-বোন এবং চোয়ালের হাড় ভেঙে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। তাঁর অপারেশন হয়েছে কিন্তু ভবিষ্যতের কর্মজীবন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত বলেই জানাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, তাঁর চিকিৎসা এবং অপারেশনের জন্য যথেষ্ট টাকার প্রয়োজন হওয়ার সংশ্লিষ্ট প্রযোজনা সংস্থা কিছু টাকা দিয়ে তারপরে তাঁদের কোনো দায় থাকবে না মর্মে তাঁর ছেলেকে দিয়ে একটি সই করিয়ে নেয়। ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসকে যোগাযোগ করায় তিনি বলেন, “আমি জানি না একজন টেকনিশিয়ান শুটিং চলাকালীন এমন দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পরে কীভাবে গা ঝেড়ে ফেলে প্রযোজনা সংস্থা! তাঁরা কি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন?” ফেডারেশন সভাপতি কি সংশ্লিষ্ট প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছেন? “আমি কথা বলেছি যাতে তাঁরা সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেন”, বললেন স্বরূপ।

তবে, প্রযোজনা সংস্থার নাম জিজ্ঞাসা করায় স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই মুখে কুলুপ স্বরূপের। তবে এটুকু বলেছেন যে প্রযোজনা সংস্থা যদি অসহযোগিতা করে তখন তিনি যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন এবং তখনই তিনি প্রয়োজনে নাম বলবেন। আপাতত প্রযোজনা সংস্থা তাঁর সঙ্গে আলোচনার যে আশ্বাস দিয়েছে তাতেই ভরসা এবং বিশ্বাস রাখছেন স্বরূপ।

কিন্তু কয়েকটা প্রশ্ন উঠছেই। আজকে হয়ত সভাপতির হস্তক্ষেপে ভরসা, বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেটাই কি দস্তুর? কেন মানবিকতা হেলান দেবে ফেডারেশনের সহযোগিতার দেওয়ালে? কেন এতটা অনিশ্চিত হয়ে উঠবে একজন টেকনিশিয়ানের জীবন? এইটুকু নিরাপত্তা না থাকলে যারা কাজ করছেন তারা কীভাবে কাজে মনোযোগ দেবেন? প্রশ্ন অনেক, উত্তর খুঁজছে ইন্ডাস্ট্রি।

Advertisement