• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী বহরমপুরের এক ব্যক্তি

বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন ভুল তথ্য দেওয়ায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

প্রতীকী চিত্র

এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যু অব্যাহত রাজ্যে। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে এক ব্যক্তির আত্মঘাতী হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, এসআইআর নিয়ে আতঙ্কের কারণেই এই চরম পদক্ষেপ নিয়েছেন ওই ব্যক্তি। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। পাশাপাশি ছিল না কোনও পুরনো নথিও। সেই কারণে চিন্তায় ছিলেন তিনি। ভোটার তালিকায় কীভাবে নাম তুলবেন সেই নিয়ে প্রতিনিয়ত চিন্তায় থাকতেন তিনি। সেই কারণেই তিনি এই চরম পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে দাবি পরিবারের। এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে বহরমপুর থানার পুলিশ। মৃত ওই ব্যক্তির নাম তারক সাহা (৫২)। তাঁর বাড়ি বহরমপুর পৌরসভার ২৪ নং ওয়ার্ডের গান্ধী কলোনি উত্তরপাড়া এলাকার।

জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকবছর ধরে তিনি এই এলাকায় মুড়িমাখা বিক্রি করে জীবনযাপন করেন তারক। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। পাশাপাশি পুরনো কোনও নথিপত্রও তাঁর কাছে ছিল না। সেই নিয়ে নিত্যদিন চিন্তা করতেন তিনি। তারকবাবু মনে করতেন, এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নাম না উঠলে তাঁকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হতে পারে। সেই কারণে আতঙ্কে বৃহস্পতিবার দুপুরে গাছে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। তারকবাবুকে উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার সময় তারকবাবুর স্ত্রী প্রিয়া সাহা বাড়িতে ছিলেন না। তিনি জানিয়েছেন, স্বামীর নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় না থাকায় তিনি আতঙ্কে ছিলেন।

Advertisement

তারক সাহার মৃত্যুর খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছন বহরমপুর পৌরসভার তৃণমূল কাউন্সিলার জয়ন্ত প্রামাণিক। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন ভুল তথ্য দেওয়ায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

উল্লেখ্য, ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআর–এর দিনক্ষণ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকে এসআইআর আতঙ্কে একের পর এক মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে। এসআইআর ঘোষণার পর সর্বপ্রথম আত্মঘাতী হন পানিহাটির প্রদীপ কর। এরপর বীরভূমের ইলামবাজারের ক্ষিতীশ মজুমদার, টিটাগড়ের কাকলি সরকারও আত্মহত্যা করেন। প্রত্যেকের পরিবারের দাবি, এসআইআর আতঙ্কেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। এসআইআর আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুরের বাসিন্দা বিমল সাঁতরা এবং হুগলির ডানকুনির হাসিনা বেগমের। আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের শেখ সিরাজউদ্দিনেরও। গত মঙ্গলবার হাওড়ার উলুবেড়িয়ার জাহির মাল ও মুর্শিদাবাদের কান্দির মোহন শেখের আত্মঘাতী হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসে। বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে আত্মহত্যা করেন সফিউল গাজি (৩৫)। মুর্শিদাবাদের জিতেন রায় নামে এক ব্যক্তিরও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এসআইআর আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তৃণমূল ও পরিবারের। বৃহস্পতিবার এসআইআর আতঙ্কে বহরমপুরের ব্যক্তি তারক সাহার আত্মহত্যার খবর সামনে এসেছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসআইআর নিয়ে রাজ্যবাসীকে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। মমতার বলেন, ‘নিজের অমূল্য প্রাণ শেষ করে দেবেন না। আমরা থালা–বাটি বেচেও আপনাদের সাহায্য করব। বুথ থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত লড়াই হবে।’ অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাজ্যবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি আশ্বাস দেন, তৃণমূল সব রকমভাবে রাজ্যবাসীকে সাহায্য করবে।

Advertisement