• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

প্রহরশেষের রাঙা আলোয়

ধারাবাহিক উপন্যাস

কাল্পনিক চিত্র

তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

সুরঞ্জনা
১.
ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান—
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান—

Advertisement

হারমোনিয়াম বাজিয়ে চোখ বুজে গান করছিল সুরঞ্জনা৷ গানটা তার খুব প্রিয়৷ বসন্তপঞ্চমী উপলক্ষ্যে গানটা গাইলে নিশ্চয়ই শ্রোতারা উদ্বেল হবে বাউল সুরাশ্রিত গানের সুর ও কথার সম্মিলনে৷

Advertisement

ঘুরেফিরে গানের আস্থায়ী গাইছিল— ঋতুরাজ বসন্ত জানিয়ে দিচ্ছে ফাগুনকে— সে দান করেছে আপনহারা প্রাণ৷
তার পরেই সুরঞ্জনা শুরু করল অন্তরা—
ফাগুন হাওয়া এসে যে রঙ দান করছে কিংশুক আর অশোককে তা দৃষ্টির অগোচরে অকারণে সুখ এনে দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্তকে৷
গানের ভিতর ডুবে যেতে যেতে মনে এক অপার্থিব আনন্দ অনুভব করছিল সুরঞ্জনা৷

রবীন্দ্রসদনে পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে তার একক করার ইচ্ছে ছিল বহুদিন, সেই ইচ্ছেকে মান্যতা দিয়ে দক্ষিণ কলকাতার ‘রবি-অনুরাগ’ সংস্থা বসন্তপঞ্চমীর দিনে আয়োজন করেছে রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠান৷ তাঁরা বলেছেন প্রথমে তাকে সংবর্ধনা দেবেন, সংবর্ধিত করতে মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী ইন্দ্রজিৎ ঘোষ৷ তারপর সংগীতানুষ্ঠান৷

এই পাওয়া সুরঞ্জনার জীবনের এক পরম প্রাপ্তি৷ তার সংগীত জীবনের কুড়ি বছর পূর্ণ হল, এই সময়কালে প্রকাশিত হয়েছে তার অনেকগুলি অ্যালবাম৷ উচ্চ–প্রশংসিত হয়েছে প্রতিটি অ্যালবাম৷

কিন্তু তার অনুষ্ঠানের সঙ্গে উদ্যোক্তারা জুড়ে দিয়েছেন আর এক শিল্পী তমোনাশ গুপ্তকে৷ তিনি কোনও নবীন শিল্পী তা নয়, খুব সম্প্রতি তাঁর গানও শ্রোতারা শুনছেন মুগ্ধ হয়ে৷ তবে তাঁর সম্পর্কে যে পরিচয় শ্রোতাদের মনে সমবেদনার জায়গা তৈরি হয়েছে তা হল তিনি দৃষ্টিহীন৷ দুটো চোখেই দৃষ্টি নেই তমোনাশ গুপ্তের৷ তার গান শুনেছে সুরঞ্জনা৷ খুবই সুকণ্ঠের অধিকারী৷ বয়সে সুরঞ্জনার কাছাকাছি তমোনাশ, কিংবা দু–এক বছরের ছোটোই হবে, সুরঞ্জনা তাকে দেখেনি কখনও, শুনেছে খুব সুদর্শন, মিতভাষী৷
ভাবনার অবকাশে গানটির সঞ্চারীতে চলে এল সুরঞ্জনা:
পূর্ণিমাসন্ধ্যায় তোমার রজনীগন্ধায়
রূপসাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়।
গানের এই অংশে কবির মন ছুটে যায় পূর্ণিমাসন্ধ্যায়, কবির উদাসী মন ধায় রজনীগন্ধায়৷
গাইতে গিয়ে নিজেও উদাসিনী হয়ে গেল সুরঞ্জনা৷ পাশের ঘরে একমনে ছবি এঁকে চলেছে চিত্রজিৎ৷ সকালের চা করে তার টেবিলে দিয়ে আসার সময় সুরঞ্জনা জিজ্ঞাসা করেছিল, ওরা আমাকে সংবর্ধনা দেবে ওইদিন, তুমি যাবে না?
চিত্রজিৎ তাকিয়েছিল আনমনা চোখে, কবে?
–– রবীন্দ্রসদনে, বসন্তপঞ্চমীর সন্ধেয়৷

কিছু না-ভেবেই উত্তর দিয়েছিল চিত্রজিৎ, না ওই দিন তো ধীমানের ছবির প্রদর্শনী দেখতে যাব কথা দিয়েছি৷
ধীমান ওর সমকালীন এক চিত্রশিল্পী৷ রবীন্দ্রসদনে স্ত্রীর একক গানের অনুষ্ঠানের চেয়ে বন্ধুর ছবির প্রদর্শনী দেখতে যাওয়াই চিত্রজিতের কাছে অধিকতর আকর্ষণ৷
—বাহ্, আমাকে সংবর্ধনা দেবে, রবীন্দ্রসদনের মঞ্চে৷ ওরা বলছে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে৷ তার মানে প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ থাকবে৷ এত রবীন্দ্রসংগীতপ্রেমী মানুষের সামনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তুমি থাকবে না!
চিত্রজিৎ তখনও তুলি বুলিয়ে চলেছে তার ক্যানভাসে, সুরঞ্জনার দিকে না-তাকিয়েই বলল, তুমি এর আগেও অনেক সংবর্ধনা পেয়েছ৷ ভবিষ্যতে আরও অনেক পাবে৷
—কিন্তু রবীন্দ্রসদনে এই প্রথম আমার একক অনুষ্ঠান৷
—একক কোথায়, সঙ্গে আর একজন জুনিয়র আর্টিস্ট আছে বলছিলে!
—তার থাকার কথা ছিল না৷ কিন্তু রত্নদীপবাবু বললেন, তমোনাশ গুপ্তকে উনি শ্রোতাদের কাছে পরিচিত করতে এই দিনটা বেছে নিয়েছেন৷ যাকে বলে ডেবিউ৷ টিকিট বিক্রি হয়েছে আমার একক অনুষ্ঠান বলে, ঠিক এরকম একটি মঞ্চে একজন নবীন শিল্পীকে সুযোগ দিতে চাইছেন৷ তার গান যদি শ্রোতারা গ্রহণ করেন, তা হলে তাকে আরও সুযোগ দিতে পারবেন৷
চিত্রজিৎ ক্যানভাস থেকে মুখ তুলে সুরঞ্জনার দিকে এক নিমেষ তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে মনোনিবেশ করল ছবিতে। বলল, আমার পক্ষে যাওয়া কোনও ক্রমেই সম্ভব নয়৷

সুরঞ্জনা মুখটা কালো করে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে৷ চিত্রজিৎ কি ক্রমশ তার থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে, একটা ইচ্ছাকৃত দূরত্ব সৃষ্টি করছে! একটি অল্পবয়সি মেয়ে প্রায়ই আসছে তার কাছে৷ কী নাম বলল, অলমিতি৷ আর্ট কলেজের ছাত্রী৷ চিত্রজিতের কোনও এক প্রদর্শনীতে ছবি দেখতে গিয়ে আলাপ৷ তারপর থেকে প্রায়ই আসছে৷ বিয়াল্লিশের চিত্রজিতের পাশে বাইশের অলমিতির সম্পর্ক কী হতে পারে তা সুরঞ্জনার ভাবনায় উঁকিঝুঁকি দেয় মাঝেমধ্যে৷

নিজের ঘরে ফিরে এসে হারমোনিয়াম টেনে নিয়ে হঠাৎ গাইতে ইচ্ছে হল:
‘সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে, ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা
সেই স্মৃতিটুকু কভু ক্ষণে ক্ষণে যেন জাগে মনে ভুলো না৷’

সুরঞ্জনার খুব অভিমান হচ্ছে এই মুহূর্তে৷ তাকে এই প্রথম এত বড়ো একটা মঞ্চে সংবর্ধিত করা হচ্ছে, সেখানে চিত্রজিৎ থাকবে না তা ভাবতেই পারছে না। চিত্রজিতের জন্য সে সবচেয়ে বড়ো ত্যাগ স্বীকর করেছে, যা একজন নারী হয়ে করতে পারে না, সে–কথা কি এখন বিস্মৃত হয়েছে চিত্রজিৎ!

গানের আস্থায়ী অংশে বিরহের ছোঁয়া, দু’জনের একসঙ্গে দোলার স্মৃতি উথলে উঠেছে এই মুহূর্তে, তারপর চলে এল অন্তরায়:
‘সেদিন বাতাসে ছিল তুমি জানো— আমারই মনের প্রলাপ জড়ানো
আকাশে আকশে আছিল ছড়ানো তোমার হাসির তুলনা৷’

সুরঞ্জনার আজও মনে পড়ে সেদিন বাতাসে ভাসছিল তার মনের প্রলাপ, তখন মনে হত আকাশে ছড়ানো যে-দৃশ্য তা তুলনীয় চিত্রজিতের হাসির সঙ্গে৷ সুরঞ্জনা ভেবেছিল সেরকমই, যখন প্রথম-প্রথম দেখা হত চিত্রজিতের সঙ্গে, তার ভিতরে তরঙ্গ তুলত এক অপার্থিব অনুভূতি৷ তার সঙ্গে দেখা হলে কিছুক্ষণ কথাই ফুটত না তার মুখে৷ কী বলবে ভেবে আকুল হত৷ যাও বা বলতে পারত, যেন কীরকম অসংলগ্ন।

সঞ্চারীতে সেই অনুভব আরও গাঢ় হয়ে দেখা দিল— যেন কোনও পূর্ণিমারাতে এক আশ্চর্য লগ্নে দেখা হয়েছিল দু’জনের৷ তখন আভোগে এসে পৌঁছেছে সুরঞ্জনা:
‘এখন আমার বেলা নাহি আর বহিব একাকী বিরহের ভার
বাঁধিনু যে রাখী পরানে তোমার সে রাখী খুলো না খুলো না৷’

শেষ কলিগুলি গাওয়ার সময় সুরঞ্জনার চোখদুটো হয়ে ওঠে অশ্রুসজল৷ তাদের বিবাহিত জীবন পার হয়ে গেছে ষোলো বছরের বেশি৷ তার যখন বাইশ, চিত্রদীপের ছাব্বিশ, সে সময় তাদের প্রথম দেখা, সুরঞ্জনার চাপেই মূলত তিন মাসের মধ্যে বিয়ে হয়ে গেল তাদের৷ তার বাবার মত ছিল না এ-বিয়েতে৷ চিত্রজিৎ শিল্পী বলেই অমত৷ শিল্পীদের চরিত্র নিয়ে তাঁর কেন যেন দ্বিধাদ্বন্দ্ব৷ কিন্তু সুরঞ্জনা তখন চিত্রজিতের জন্য পাগল৷ কোনও আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়নি, শুধুমাত্র রেজিস্ট্রারের চেম্বারে গিয়ে কয়েকটা সই৷ আজ তাই বিরহের ধ্বনি ফুটে উঠছে মনের অন্তরালে, তার মন বলছে চিত্রজিতের উদ্দেশে, ‘যে-রাখী বেঁধেছিলাম তা যেন খুলো না৷ এখন আর সেই বেলা নেই যে, একা বিরহের ভার বইতে পারি৷’

গানটা শেষ হওয়ার অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত চুপ করে বসে রইল খাটের উপর৷ মাঝে আর কয়েকদিন মাত্র সময়, তার মধ্যে অনেকগুলো গান তৈরি করতে হবে৷ সুরঞ্জনা অন্যমনস্কভাবে ওল্টাতে থাকে গীতবিতানের পাতা৷ খুঁজে পেল আরও একটা বসন্তের গান৷ ‘শাপমোচন’ কথিকাতে বধূর পতিগৃহে যাওয়ার সময় সখীরা সুন্দরকে প্রণাম করে গেয়েছে গানটি :
‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে––
তোমার আপন রাগে, তোমার গোপন রাগে,
তোমার তরুণ হাসির অরুণ রাগে
অশ্রুজলের করুণ রাগে৷’

গানটির মধ্যে যে-দোলা আছে, তা নিজের মনেও সঞ্চারিত করতে চাইল সুরঞ্জনা৷ গভীর হৃদয়ানুভূতির প্রকাশ এই গানটিতে, সূক্ষ্মভাবে অতীন্দ্রিয় উপলব্ধির কেন্দ্রে গিয়ে আঘাত করেছে গানটির কথা ও সুর৷ ‘রঙ যেন মোর মর্মে লাগে / আমার সকল কর্মে লাগে’— আমার সমস্ত কাজে যেন রঙ লেগে তা প্রবেশ করে মনের মধ্যে৷ সুরঞ্জনা একাগ্র হয়ে গাইতে থাকে:
‘যাবার আগে যাও গো আমায় জাগিয়ে দিয়ে
রক্তে তোমার চরণ-দোলা লাগিয়ে দিয়ে৷’

সমস্ত সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি দিতে পারে সীমাহীন ব্যাপ্তিগুলো৷ এই গানের প্রতিটি চরণ যেন এক আশ্চর্য দোলা দিয়ে পৌঁছে যায় মনের গভীরে৷ ‘বিশ্ব নাচের কেন্দ্রে যেমন ছন্দ জাগে’ তেমনই ছন্দ সঞ্চারিত হচ্ছে তার ভিতর৷ সুরঞ্জনার যখনই মন উতলা হয়, কোনও কাজে মন লাগে না, তার এই গানটা গাইতে ইচ্ছে হয়৷ এ এক আশ্চর্য মন-ভালো করা গান৷ দুঃখের আঁচে কী এক স্নিগ্ধ প্রলেপ দিয়ে নিবিয়ে দেয় সব দহন৷
বেশ কিছুক্ষণ গানটির মধ্যে বসবাস করল সুরঞ্জনা৷ কিছুক্ষণ থামল৷ কী যেন ভাবল৷ মনে হচ্ছিল এই গানটি বুঝি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তার জন্যই৷ কিন্তু তা তো নয়, শান্তিনিকেতনে বসবাস করর সময় ‘নটরাজ ঋতুরঙ্গশালা’র জন্য এরকম পাঁচটি বসন্ত অনুষঙ্গের গান রচনা করেন তিনি৷ নটরাজের তাণ্ডবে তাঁর এক পদক্ষেপের আঘাতে বহিরাকাশে রূপলোক আবর্তিত প্রকাশ পায়, অন্য পদক্ষেপের আঘাতে অন্তরাকাশে রসলোক উন্মোথিত হতে থাকে৷ অন্তরে বাহিরে মহাকালের এই বিরাট নৃত্যচ্ছন্দে যোগ দিতে পারলে জগতে ও জীবনে অনন্ত লীলারস উপলব্ধির আনন্দে মন বন্ধনমুক্ত হয়৷

তারপর আবার ওল্টাতে শুরু করে গীতবিতানের পাতা৷ চোখ আটকে গেল বসন্তের আর একটি গানে, নবীন নাট্যগীতিতে ভৈরবী রাগাশ্রিত এই গান শুরু করল আস্থায়ী অংশ :
‘ঝরাপাতা গো, আমি তোমারই দলে৷
অনেক হাসি অনেক অশ্রুজলে
ফাগুন দিল বিদায়মন্ত্র আমার হিয়াতলে৷’
গাইতে গাইতে চৈত্রের হাওয়ায় উড়তে থাকা রাশি রাশি ঝরাপাতার চিত্রকল্পটি স্মরণে এল সুরঞ্জনার৷ চৈত্র মানে বসন্তের বিদায়বেলা৷
একটু আগে তার সংগীতের অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে চিত্রজিতের সরাসরি প্রত্যাখ্যান কোথাও একটা চিনচিনে ব্যথার ছুঁচ ফোটাচ্ছিল৷ গানের কলিগুলো বারবার গাওয়ার কারণে যন্ত্রণাটা উবে যাচ্ছিল আস্তে আস্তে৷ ষোলো বছর আগের স্মৃতি মনে পড়ছে৷ শিল্পী চিত্রজিতের প্রদর্শনী দেখে সুরঞ্জনা তখন সম্মোহিত৷ বিশাল সাইজের এক–একটা ল্যান্ডস্কেপ দেখে সুরঞ্জনা জিজ্ঞাসা করেছিল, ছবিগুলো কি কল্পনার জগতের, না বাস্তবেই আছে কোথাও?
চিত্রজিৎ হেসে বলেছিল, বাস্তবেই আছে৷ প্রতিটি দৃশ্যপটের সামনে বসে এই ছবিগুলো আঁকা৷
—কোথায় সেই দৃশ্যপট? এ যেন মর্ত্যের বুকে এক-এক টুকরো স্বর্গ৷
—সবই কাছেপিঠে কোথাও৷ আসলে দৃশ্যগুলো চারপাশে ছড়ানো–ছিটোনো থাকে৷ কিন্তু সাদা চোখে ধরা পড়ে না৷ শিল্পী যখন সেই দৃশ্যপটকে ধরে রাখেন ক্যানভাসে, নানা রঙে রঞ্জিত করেন, তখন সেই দৃশ্যপট হয়ে ওঠে স্বর্গ৷
সুরঞ্জনা বলেছিল, বুঝলাম৷ মর্ত্যভূমি স্বর্গ হয়ে ওঠে শিল্পীর সত্তার গুণে৷
চিত্রজিৎ কিছু না-বলে উপহার দিয়েছিল একটুকরো হাসি৷
সুরঞ্জনা বিড়বিড় করেছিল, এরকম শিল্পীর সঙ্গে বাস করতে পারলেই তো পৃথিবী হয়ে উঠবে স্বর্গ৷
কিছুদিনের মধ্যে চিত্রজিতের প্রেমে সুরঞ্জনা উন্মাদ, কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব দিলে চিত্রজিৎ বলেছিল, আমি তো ভেবেছিলাম বিয়ে করব না৷
সুরঞ্জনা বিস্মিত হয়ে বলেছিল, সে কী, কেন?
—আমি ছবি এঁকেই কাটিয়ে দিতে চাই জীবন৷ বিয়ে করা মানে, সংসার করা, সন্তান প্রতিপালন করা৷ জীবনের একটা বড়ো অংশ নিয়ে নেবে সংসারের দায়দায়িত্ব৷
সুরঞ্জনা একটা বড়ো ধাক্কা খেয়েছিল— তা হলে?
কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে চিত্রজিৎ বলেছিল, বিয়ে করতে পারি, কিন্তু সন্তান নেব না৷
সুরঞ্জনা স্তব্ধ হয়ে ছিল বহুক্ষণ৷ চুরমুর হয়েছিল দ্বিধাদ্বন্দ্বে, তারপর বলেছিল, ঠিক আছে, তাই হবে৷

(ক্রমশ)

অলঙ্করণ: সোময়েত্রী চট্টোপাধ্যায়

Advertisement