• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

এক ইনিংস ও ১৪০ রানে জয়, ভারতের কাছে নাস্তানাবুদ ওয়েস্ট ইন্ডিজ

দ্বিতীয় ইনিংসে যশপ্রীত বুমরা সেইভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। বরঞ্চ মহম্মদ সিরাজ ও কুলদীপ যাদব হাত ঘুরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরকে নাজেহাল করে দিয়েছেন।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

এ কোন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল! পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ মাত্র আড়াই দিনে খেল খতম। প্রথম টেস্ট ম্যাচে ভারতীয় ব্রিগেড একেবারে ছেলেখেলা করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে। এক ইনিংস ও ১৪০ রানে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিতে কোনও বেগ পেতে হল না ভারতকে। একটা সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলতেই ভয়ের বাতারণ তৈরি হতো। আর এখন ভারতের তরুণ ব্রিগেডকে দেখলে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়, যে কোনও দেশ চাপের মধ্যে পড়ে যায়।

দেশের মাটিতে স্পিন সহায়ক উইকেটে ভারতের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে এখানকার ২২ গজের উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এমন করুণ অবস্থায় দেখতে হবে, তা কেউই বিশ্বাস করতে পারেননি। যেভাবে ভারতের বোলারদের আক্রমণে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা ভূপতিত হয়েছেন, তা প্রত্যাশিত ছিল না। কোনওভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তেজনারাইন চন্দ্রপাল, সাই হোপেরা বা ব্রান্ডন কিং-রা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি জশপ্রীত বুমরা, কুলদীপ যাদব, মহম্মদ সিরাজ ও রবীন্দ্র জাদেজাদের আক্রমণাত্মক বোলিং মোকাবিলা করতে। শনিবার খেলার তৃতীয় দিনে উইকেটে বল যেভাবে ঘুরছে, তা সামাল দেওয়া বেশ কঠিন হয়ে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের। তাই ক্রিকেট রণক্ষেত্রে ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

Advertisement

আসলে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৬২ রানের জবাবে খেলতে নেমে দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারত ৫ উইকেটে ৪৪৮ রান করে বড় ব্যবধানে (২৮৬) এগিয়ে থাকে। ভারতের তিন ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল, ধ্রুব জুরেল ও রবীন্দ্র জাদেজা শতরান উপহার দিয়েছেন স্কোর বোর্ডে। পাশাপাশি, অধিনায়ক শুভমন গিলের অর্ধশতরান দলকে সমৃদ্ধ করেছে। তাই কোনও সন্দেহ ছিল না জয়ের লক্ষ্যে ভারত অনেকটা এগিয়েছিল। সেই কারণে তৃতীয় দিনে খেলা শুরু হওয়ার আগেই ভারতের অধিনায়ক শুভমন গিল দান ছেড়ে দিয়ে প্রতিপক্ষ দলকে দ্বিতীয় ইনিংস খেলার জন্য আহ্বান করেন। এই আহ্বানে অধিনায়ক হোপ একটু অস্বস্তিতে পড়ে যান। আসলে তিনি ভালো করে জানতেন সকালের উইকেটে ভারতীয় বোলাররা অনেক বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন। সেই ভাবনাই আতঙ্কে ফেলে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে। ভারতীয় বোলারদের হাতের ঘূর্ণিতে নাজেহাল হয়ে যান প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা। যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজ, রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব ও ওয়াশিংটন সুন্দররা যেভাবে আক্রমণ শানিয়েছেন, তাতে চন্দ্রপাল, ব্র্যান্ডন কিং, জে গ্রিভেস বা সাই হোপরা কোনও দিশা খুঁজে পাননি বলেই প্যাভিলিয়নে ফেরত যেতে সেইভাবে সময় অতিবাহিত করতে হয়নি। অনেকটা সেই কথা প্রযোজ্য হয়েছে আসি তাই, চলে যাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যর্থ হয়েছেন, তাতে আগামী দিনে এঁদের প্রতি কি ভরসা রাখা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

Advertisement

তারই মাঝে কিছুটা ব্যতিক্রম হিসেবে দেখতে পাওয়া গেছে অ্যাফনাজকে। তাঁর ব্যাট থেকে ৩৮ রান এসেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার পুরোপুরি ব্যর্থ। জন ক্যাম্পবল ১৪ রানে রবীন্দ্র জাদেজার বলে ক্যাচ তুলে দেন সাই সুদর্শনের হাতে। অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম উইকেটটি হারায় ১২ রানের মাথায়। মহম্মদ সিরাজের বলে মারতে গিয়ে চন্দ্রপাল ধরা পড়েন নীতীশকুমার রেড্ডির হাতে। তিনি পাখির মতো উড়ে গিয়ে চন্দ্রপালের ব্যাট থেকে আসা ক্যাচটা তালুবন্দি করেন। ফ্রেমে বাঁধানো থাকবে নীতীশের অসাধারণ ক্যাচটা। চন্দ্রপাল মাত্র ৮ রানে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে পা বাড়ান। স্কোয়ার লেগে যে ক্যাচটা নীতীশ ধরলেন, তা দেখে অবাক হয়ে যান চন্দ্রপাল। তিনি নিজে ব্যাটে হাত থাবড়ে বাহবা জানাতে ভুল করেননি। ২২ বছরের নীতীশ যেভাবে এদিন ফিল্ডিং দিলেন, তাতে শিরোনামে জায়গা পেয়ে যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনও ব্যাটসম্যান রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ যাদবের স্পিন বেহালিংয়ে কী যাদু আছে, তা বুঝতেই পারেননি। মাত্র ৪৬ রানে ৫টি উইকেট পড়ে যেতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে হতাশার ছবি স্পষ্ট হয়ে যায়।

তবে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ক্যারিবিয়ান আথানাজ ও জাস্টিন গ্রেভস জুটি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু বেশিক্ষণ তা স্থায়ী হয়নি। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে তাঁদের আসে ৪৬ রান। আফনাজকে এলবিডব্লু করে ওয়াশিংটন সুন্দর প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়ে দেন। তারপরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে ধস নেমে এসেছে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। তার পরের ওভারে মহম্মদ সিরাজ জোড়া আঘাত হানেন। গ্রেভস এবং ওয়ারিকান আউট হন সিরাজের আক্রমণে। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের মধ্যে কেউই আগ্রাসী ভূমিকা নিতে পারেননি। জোহন লেইন ১৪ রানে আউট হন। খারি বোরে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন। আর জেডন সিলসের ব্যাট থেকে আসে ২২ রান। প্রায় দর্শকহীন স্টেডিয়ামের সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে মাত্র ১৪৬ রানে। হার মানতে হয় ভারতের কাছে এক ইনিংস ও ১৪০ রানে।

তবে দ্বিতীয় ইনিংসে যশপ্রীত বুমরা সেইভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। বরঞ্চ মহম্মদ সিরাজ ও কুলদীপ যাদব হাত ঘুরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরকে নাজেহাল করে দিয়েছেন। এদিন আবার অল রাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা বোলিংয়ে দুরন্ত ভূমিকা পালন করেছেন। জাদেজা ৪টি উইকেট নিয়েছেন। পাশাপাশি, মহম্মদ সিরাজ তিনটি উকেট নিয়ে প্রতিপক্ষ দলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন ভারতের বোলারদের হাত থেকে আগুন ঝরে।

ভারতের তরুণ ক্রিকেটাররা বুঝিয়ে দিয়েছেন বুক চিতিয়ে তারা লড়তে চানে। এশিয়া কাপে দুরন্ত জয়ের পরে আত্মবিশ্বাসী ভারতীয় ক্রিকেটাররা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ভারতের আক্রমণাত্মক লড়াইয়ের সামনে এখন কোনও দলই দাঁড়াতে পারবে না বলে বিশ্বাস। আসলে তরুণ ক্রিকেটারদের সাহসী ও আগ্রাসী ভূমিকাকে তারিফ করতে হবে। দুই টেস্ট সিরিজে ভারত এগিয়ে থাকল প্রথম টেস্ট ম্যাচে জয়ের সুবাদে। দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ হবে দিল্লিতে। দিল্লি টেস্ট ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা, তা দেখার বিষয়। কিন্তু সবার প্রশ্ন থাকবে ভারতীয় দলের দাপটের কাছে প্রতিপক্ষ দল কিছু করতে পারবে না।

Advertisement