• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

কোন্নগরের ঘোষালবাড়ির দুর্গাপুজোর ৫৭১ বছর

৫৭১ বছরের কোন্নগরের দুর্গাবাড়িতে পা রাখলে যে কেউ কিছুটা অবাক হবেন। কারণ, দুর্গামণ্ডপ শুধু নয়, গোটা বাড়িটাই একেবারে ঝাঁ চকচকে।

ফাইল ছবি।

৫৭১ বছরের কোন্নগরের দুর্গাবাড়িতে পা রাখলে যে কেউ কিছুটা অবাক হবেন। কারণ, দুর্গামণ্ডপ শুধু নয়, গোটা বাড়িটাই একেবারে ঝাঁ চকচকে। নবকলেবরে গড়ে তোলা হয়েছে ঘোষালদের জীর্ণ দুর্গাবাড়িকে। অবশ্যই তার প্রাচীন স্থাপত্য রূপকে বজায় রেখে। ১৪৫৪ সালে আশুতোষ ঘোষাল হুগলি জেলা তো বটেই বাংলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোর গোড়াপত্তন করেছিলেন। তারপর থেকে চলে আসছে এই পুজো। আর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের দামামাও থামাতে পারেনি মা দুর্গার আগমনকে।

দিল্লির মসনদে তখন সম্রাট বহলোল লোদির শাসন চলছে। ১৪৫৪ সালে সেই লোদি আমলে এই দুর্গাপুজোর পথচলা শুরু। তারও প্রায় ১০০ বছর পরে মোগলরাজ আকবরের সনদ নিয়ে ঘোষালদের জমিদারি স্বীকৃত হয়। কনৌজের বেদান্ত ব্রাহ্মণ হিসাবে একাদশ শতাব্দীতে বাংলার মহারাজ আদিসুরের আমন্ত্রণে বাংলায় এসে পরে লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় নবরত্নের একজন হিসাবে আসন গ্রহণ করেছিলেন সুধাসিধি। সুধাসিধির বংশধরেরাই ঘোষাল উপাধি পান। এই ঘোষালদের একটি অংশ কোন্নগরে আসে। পরবর্তীকালে সম্রাট আকবরের সনদের মাধ্যমে জমিদার হিসাবে স্বীকৃতি পান কোন্নগরের ঘোষালরা। আরও আছে। ব্রিটিশ সরকারও এই বনেদিবাড়ির পুজোকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। সেই আমলে অর্থাৎ প্রায় ৩০০ বছর আগে তারা পুজোর উৎসবে ঘোষাল পরিবারকে ৭৫০ টাকা অনুদান প্রদান করে। সেই থেকে ফি বছর এই অর্থ দুর্গাপুজো বাবদ ঘোষালরা পান।

Advertisement

পুজোর রীতিনীতি একই আছে। দুর্গামণ্ডপে উৎসবের দিনগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তী শিল্পীরা নাটমন্দিরে সঙ্গীত পরিবেশন করে গিয়েছেন। কোভিডের আগে পণ্ডিত গোবিন্দ বসু দুর্গাপুজোয় তবলা লহরা করেছেন।

Advertisement

ইদানিং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচগানের সঙ্গে বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে উঠে এসেছে পরিবারের সদস্যদের দ্বারা অভিনীত নাটক। চলতি বিষয় প্রাধান্য পায় সংক্ষিপ্ত এই নাটকে। গতবার থিম ছিল আরজি করের অভয়াকাণ্ড। পরিবারের সদস্য আনন্দ ঘোষাল জানালেন, এ বছরের থিম হল, ‘বাংলা এবং বাঙালির অস্মিতা’। বিভিন্ন রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষীদের ওপর যেসব অত্যাচার হচ্ছে তারই প্রতিবাদ। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মতো মহান চরিত্রগুলি তুলে ধরে বাঙালির অস্মিতাকে নাটকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

Advertisement