নির্মল করণ
খুব অল্প সময়ের মধ্যে শিশুসাহিত্যে প্রথম সারিতে উঠে আসা এক পত্রিকার নাম— ‘পৃথ্বীরাজ’। পার্থপ্রতিম পাঁজা সম্পাদিত ‘পৃথ্বীরাজ’-১৪৩২ উৎসব- বার্ষিকী হিসেবে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে রোহিণী নন্দন প্রকাশনা থেকে। প্রকাশক হরিদাস তালুকদার। বিগত বছরগুলোর মতোই এবারও ‘পৃথ্বীরাজ’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে একটা আলোড়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সকল শ্রেণির পাঠক লেখক খোঁজ নিচ্ছেন ‘পৃথ্বীরাজ’-এর। গতানুগতিক ভাবনা থেকে ‘পৃথ্বীরাজ’কে স্বতন্ত্রভাবে তুলে ধরার জন্য সম্পাদক সাহিত্যিক পার্থপ্রতিম পাঁজার এক নিরলস প্রচেষ্টা কাজ করে চলেছে প্রতিনিয়ত। লেখার মানের কাছে তিনি কখনও আপস করেননি। পাশাপাশি কাগজের মান, ছাপা, অলংকরণ সবেতেই উচ্ছ্বসিত প্রশংসার দাবি রাখে এবারের ‘পৃথ্বীরাজ’। বোর্ড বাঁধাই পুজোবার্ষিকী চোখে পড়ে না বললেই চলে। ‘পৃথ্বীরাজ’ কিন্তু সুদৃশ্য বোর্ড বাঁধাই-সহ আত্মপ্রকাশ করেছে। পত্রিকাটি এ বঙ্গের বাইরে যেমন পাড়ি দিয়েছে, তেমনি পাড়ি দিয়েছে বিদেশেও। ইংল্যান্ড, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ঠিকানা থেকে পাঠকেরা সংগ্রহ করতে পারছেন ‘পৃথ্বীরাজ’। দিগ্বিজয়ী ‘পৃথ্বীরাজ’-এর ঝুলিতে এসেছে বিশ্বসাহিত্যের নানান সম্ভার। সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, ম্যাক্সিম গোর্কি, লিও টলস্টয়, লু সুন, চে গেভারা যেমন এসেছেন, তেমনি এসেছেন রবীন্দ্রনাথ, উপেন্দ্রকিশোর, যোগীন্দ্রনাথ, সুকুমার রায়, আল মাহমুদ, অশোকবিজয় রাহা প্রমুখ। বলা যায় এ এক অভিনব ভাবনা। পুজো বিষয়ক বিশেষ নিবন্ধ লিখেছেন পবিত্র সরকার।
Advertisement
এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তথ্যনিষ্ঠ প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখেছেন অঙ্কন রায়, কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, কুমারেশ চক্রবর্তী, ভাস্বতী মিত্র প্রমুখ। গল্প বিভাগ আলোকিত করেছেন বাংলা সাহিত্যের দিকপাল লেখকেরা। লিখেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, ভগীরথ মিশ্র, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, অমর মিত্র, নলিনী বেরা, বাণীব্রত চক্রবর্তী, চুমকি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এছাড়াও ছোটদের মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প উপহার দিয়েছেন রাজীব শ্রাবণ, বিকাশকলি পোল্যে, বুলবুল মৈত্র, অলোক বসু, তনুজা চক্রবর্তী প্রমুখ।
Advertisement
ছড়া কবিতা বিভাগটিকে গুরুত্ব সহকারে সাজানোর চেষ্টা করেছেন সম্পাদক। এই বিভাগে কলম ধরেছেন শ্যামলকান্তি দাশ, চন্দন নাথ, উত্থানপদ বিজলী, আনসার উল হক, লুৎফর রহমান, মধুসূদন ঘাটী, উৎপলকুমার ধারা, প্রদীপ আচার্য, শ্যামাচরণ কর্মকার, অংশুমান চক্রবর্তী, সমর পাল, নীলাচল চট্টরাজ, সঞ্জীব কুমার দে, স্বপনকুমার রায়, সুব্রত চৌধুরী, তপনকুমার বিজলী, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস, অমিত চট্টোপাধ্যায়, চন্দন চক্রবর্তী-সহ আরও অনেক কবি। বেশ মজার উপন্যাস লিখেছেন তাপস রায়। রতনতনু ঘাটির এক জমজমাট কাহিনী ‘ছবি-আঁকিয়ে বিজনবাবুর ভূত’ উপন্যাস। শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনায় ভরা পার্থপ্রতিম পাঁজার ‘হাজারদুয়ারি রহস্য’ উপন্যাস মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিল। কাহিনীর মূল চরিত্র কিশোর পিকলু। লেখকের পিকলু সিরিজের অনেকগুলো উপন্যাস ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদা, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদা, সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা-র মতো পার্থপ্রতিম পাঁজার পিকলু বাংলা সাহিত্যে আগামী দিনে এক পরিচিত চরিত্র হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য।
‘প্রবাসে পরবাসে’ বিভাগটি পড়তে বেশ ভালো লাগল। এখানে ছোটোদের মনের মতো নানা বিষয় নিয়ে লিখেছেন অনিন্দিতা বসু, ভায়লেট হালদার, আরজু মুন জারিন ও পিনাকী চট্টোপাধ্যায়। জো পটারের মূলগল্প অনুবাদ করেছেন সিমি স্পার্কস। ‘প্রবাসে বেড়ু বেড়ু’ অংশে ‘প্রথম ইউরোপ যাত্রা’ বিষয়ে কলম ধরেছেন সুধা বসু। এছাড়াও খেলাধুলো, জ্ঞান বিজ্ঞান, ক্যুইজ, পুস্তক পরিচয়, কল্পবিজ্ঞানের গল্প, ছোটোদের লেখালেখি ইত্যাদি বিভাগও রয়েছে দু’মলাটের মধ্যে। পত্রিকার একটি বিশেষ দিক এই যে, কচিকাঁচাদের অনেকেই ছোটদের বিভাগে কলম ধরতে এগিয়ে এসেছে– অব্দিজা চিকি, দেবলীনা নেয়ে, দেবরাজ মেহেতা, ভূমিকা দেওয়াশী ও কাজী রোহা আনান। খেলাধুলা বিভাগে ‘দুই কীর্তিমানের রুদ্ধশ্বাস কাহিনী’ চমৎকার ভাবে উঠে এসেছে হাননান আহসানের কলমে। সদ্য বালসাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিঃসন্দেহ পাঠককে সমৃদ্ধ করবে। পুস্তক আলোচনায় অংশ নিয়েছেন শান্তিব্রত চট্টোপাধ্যায়, নির্মল করণ ও স্বপনকুমার বিজলী। পত্রিকাতে রঙবেরঙের ছবি উপহার দিয়েছে স্কুল পড়ুয়াদের অনেকেই। এভাবেই ছোটোদের কাছে বড়ো আপন হয়ে উঠেছে ‘পৃথ্বীরাজ’। পাতায় পাতায় রসদ সাজানো এবং পরিকল্পনায় মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন সম্পাদক পার্থপ্রতিম পাঁজা। সুন্দর প্রচ্ছদ এঁকেছেন প্রদীপ গুড়িয়া। পাতায় পাতায় অভিজিৎ কর্মকারের অলংকরণ পত্রিকার সৌকর্য বাড়িয়েছে। ছোটো বড়ো সকলের কাছে ‘পৃথ্বীরাজ’ হয়ে উঠেছে এক আকর্ষণীয় পুজোবার্ষিকী।
পৃথ্বীরাজ / সম্পাদক: পার্থপ্রতিম পাঁজা
প্রকাশক: রোহিণী নন্দন/ মূল্য : ৩০০ টাকা
Advertisement



