মার্কিন ডলারের তুলনায় ভারতের টাকার মূল্য পতন আবার রেকর্ড তৈরি করেছে। প্রতি ডলারের মূল্য এসে ঠেকেছে ৮৮.৪৫ টাকায়। অর্থনীতিবিদদের দাবি, ডলারের মূল্য শীঘ্রই ৯০ টাকা হবে। অতীতে কোনোদিন ডলারের তুলনায় টাকা এতটা সস্তা হয়নি। টাকার এমন মূল্য হ্রাসে সরাসরি সাধারণ মানুষের প্রত্যক্ষ উপলব্ধি তেমন না হলেও অর্থনীতির উপর নেতিবাচক ধাক্কা তাঁদের যন্ত্রণা বাড়ায় সকলের অগোচরেই। স্বাধীনতার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য কমছে। এতে রপ্তানিকারকদের কিছুটা সুবিধা হলেও হতে পারে। কিন্তু আমদানিকারীরা বিপাকে পড়বেন।
এক সময় ডলার ও টাকার মূল্য প্রায় সমান সমান থাকলেও আজ এক ডলারের বিনিময় মূল্য সাড়ে ৮৮ টাকার মতো। দ্রুততার সঙ্গে টাকার মূল্য পতন নিয়ে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে নির্বাক থেকে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতদিন পর্যন্ত দেশে যত সরকার দেশ পরিচালনা করেছে তার মধ্যে নিকৃষ্টতম হলো মোদী সরকার। মোদীর দশ বছরের রাজত্বে ডলারের মূল্য ৬০ টাকা থেকে ৯০ টাকার কাছাকাছি এসে গিয়েছে। অবাধ এই পতন ঠেকানোর সামর্থ্য নেই মোদী সরকারের।
Advertisement
কোনও দেশের মুদ্রা মূল্য দেশের অর্থনীতির শক্তি-সামর্থ্য, গতিশীলতা ব্যাপ্তির পরিচয়। অথচ এই নরেন্দ্র মোদী গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে ইউপিএ সরকারের আমলে টাকার মূল্য পতন নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপসহ কটাক্ষ করতে। এখন দেখা যাচ্ছে মোদীর সরকার মনমোহন সিং সরকারের থেকে দ্বিগুন অপদার্থ।
খোলা বাজারের নিয়ম অনুযায়ী যে মুদ্রার যত বেশি চাহিদা সে মুদ্রার মূল্য ততো বেশি। মুদ্রার বাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে টাকার মূল্য কমতে থাকবে। বিদেশি লগ্নিকারীরা শেয়ার বাজারে বেশি বেশি লগ্নি করলে, বিদেশে কর্মরত ভারতীয়রা বেশি বেশি ডলার দেশে পাঠালে, বিপুল প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এলে দেশে ডলারের যোগান বাড়ে, তখন টাকার মূল্য বেশি থাকে। কিন্তু বর্তমানে এর উল্টোটা হচ্ছে। বিদেশি লগ্নি দ্রুত দেশ ছাড়ছে।
Advertisement
চলতি বছরে মোট ১১০০ কোটি ডলার বিদেশি লগ্নি দেশ ছেড়েছে। মার্কিন শুল্ক চাপে বাণিজ্য অনিশ্চিত হওয়ায় অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। রপ্তানি অর্ডার থমকে যাওয়ার ফলে ডলার আয় কতটা হবে তা কেউ জানে না। বিপরীতে আমদানি খরচ বাড়বে হু হু করে। সবটাই অনিশ্চিত। অর্থাৎ অর্থনীতি নিয়ে কেউ আশার আলো দেখাতে পারছে না। রপ্তানিতে অতি মার্কিন নির্ভরতা কাল হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, চলতি বছরে এশিয়ার প্রায় সব দেশের মুদ্রাই ডলারের তুলনায় ০.০৪ শতাংশ থেকে ৯.৫ শতাংশ মূল্য বেড়েছে। কিন্তু ভারতের টাকার মূল্য কমেছে ৩.৫ শতাংশ। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি, বিশ্বের সর্বোচ্চ হারে বিকাশমান অর্থনীতি ইত্যাদি ঢাক পিটিয়ে আসল সত্য চাপ দেওয়া যায় না। সত্য এটাই এদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না, মানুষের আয় বাড়ে না, জিনিসের দাম কমে না, অথচ কর্পোরেট মুনাফা বেড়ে চলেছে, আয় ও সম্পদ বৈষম্য বিশ্বের যে কোনও দেশের থেকে বেশি হারে বেড়ে চলেছে। ধর্মান্ধতার অফিম খাইয়ে মোদীরা এই নির্মম সত্যগুলি লুকিয়ে রাখতে ব্যস্ত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টে প্রায় এক দশক আগে ২০১৬ সালে বিচারপতি জেএস খেহর ও বিচারপতি এসএ বোরদের বেঞ্চ রায় দিয়েছিলেন, ঠিকা শ্রমিকদের শিল্পে সম কাজে সম বেতন মেলা উচিত। গত এক দশকে সংগঠিত শিল্পে দ্বিগুন হারে বেড়েছে ঠিকা শ্রণিক। শ্রমিক কম মজুরিতে কাজ করায় তাঁর পরিবারকে চরম দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটাতে হয়। শ্রমিকরা ভাল করে জানেন, কম মজুরিতে কাজ না করলে তাঁর পরিবারের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এই কম মজুরি কার্যত দমনমূলক দাস প্রথা বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত মনে করে, এর অবসান হওয়া উচিত।
ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য পড়ে যাওয়ায় খাদ্য দ্রব্যের মূল্যেও আকাশ ছোঁয়া হয়েছে। মজুরি কম মেলায় সঙ্কট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
Advertisement



