দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কে দুর্গাপুজো নিয়ে এবার সরগরম রাজনীতি। ভিন রাজ্যে বাঙালিদের উপর নানারকম হেনস্তার অভিযোগের মাঝেই বিজেপি এবার দিল্লির বুকে বাঙালি ভোটব্যাঙ্ককে লক্ষ্য করে নতুন কৌশল নিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথে হেঁটেই দিল্লির পুজো কমিটিগুলিকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করেছে বিজেপি।
প্রসঙ্গত, শুরু থেকেই দক্ষিণ দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক ‘মিনি কলকাতা’ নামে পরিচিত। দুর্গাপুজো থেকে জগদ্ধাত্রী, কালীপুজো— এই এলাকাতেই বাঙালির সব উৎসবের জমজমাট আয়োজন হয়। এই আবেগকেই হাতিয়ার করে দিল্লি বিজেপির একাংশ সম্প্রতি পূর্ব দিল্লির কয়েকটি পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের নিয়ে দিল্লি প্রদেশ সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেবা এবং দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর বিনয় সাকসেনার সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি সাংসদ ও অভিনেত্রী লকেট চ্যাটার্জীও। বৈঠকে মূলত পুজো কমিটিগুলিকে কিছু আর্থিক অনুদান পাইয়ে দেওয়ার বিষয়েই আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে।
Advertisement
তবে এই বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভ দেখা দেয় চিত্তরঞ্জন পার্কের মূল পুজো কমিটিগুলির মধ্যে। এবারে রাজধানীর তিনটি পুজো কমিটি ৫০ বছরে পা দিচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ, কোনও রকম যোগাযোগ ছাড়াই এই বৈঠক করা হয়েছে। ‘বি’ ব্লক পুজো কমিটির সম্পাদক আশিস সোম স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘এই ধরনের কোনও বৈঠকের খবর আমাদের কাছে নেই। তাই আমাদের যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’ একইভাবে পকেট-৪০ ব্লকের সম্পাদক সমরেশ ভদ্র জানান, ‘শুধু শুনেছি বৈঠক হয়েছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি বা কোনও ফোনও আসেনি।’
Advertisement
এই ঘটনার পর চাপের মুখে পড়েছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চ্যাটার্জীও। বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘আমি কিছুই জানিনা, আমাকে দিল্লি বিজেপির প্রকোষ্ঠ থেকে মুখার্জী বাবু বললেন, ওদের সঙ্গে এল জি-র বাড়িতে দেখা করতে যেতে, যাতে দিল্লির পুজো কমিটিগুলোকে কিছু অনুদান পাইয়ে দেওয়া যায়।’
প্রবাসী বাঙালি প্রকোষ্ঠের ইন-চার্জের সাফাই, ‘আমি প্রবাসী বাঙালি, আমি চিত্তরঞ্জন পার্কের কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি, তাই তাঁদের ডাকা হয়নি।’ কিন্তু এই সাফাইকে একেবারেই বিশ্বাস করতে পারছে না রাজনৈতিক মহল। তাঁদের বক্তব্য, দিল্লির প্রাচীনতম বাঙালি কলোনি চিত্তরঞ্জন পার্কে একাধিক সামাজিক সংগঠন রয়েছে। যোগাযোগ না করার দাবি আসলে অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিল্লি বিজেপির এই পদক্ষেপের পিছনে রয়েছে স্পষ্ট রাজনৈতিক স্বার্থ। একদিকে প্রবাসী বাঙালি ভোটকে আকর্ষণ করার চেষ্টা, অন্যদিকে বাংলার বাইরে বাঙালিদের উপর হেনস্থার অভিযোগকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা। বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, এই উদ্যোগ প্রমাণ করছে যে, বিজেপি বাঙালিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির রাজনীতিতেই ভরসা রাখছে এবং ভোটের আগে তাদের আবেগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
Advertisement



