• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

গণতন্ত্রের উপর হিটলারি আঘাত কেন্দ্রের : মমতা

বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, যে কোনও মূল্যে কেন্দ্রের নয়া বিলকে আটকাতে হবে। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে বাঁচানোর সময় এসেছে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রধানমন্ত্রী, কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রী যদি টানা ৩০ দিন জেলে থাকেন, তা হলে তাঁকে ছাড়তে হবে মন্ত্রিত্ব! এই মর্মে বুধবার লোকসভায় বিল পেশ করেছে কেন্দ্র। বিলের তীব্র বিরোধিতা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কালো দিন’ এবং ‘কালো বিল’ আখ্যা দিয়ে তাঁর মত, এই বিল এনে হিটলারি কায়দায় গণতন্ত্রের উপর আঘাত হানতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার! কেড়ে নেওয়া হচ্ছে আদালত-বিচারব্যবস্থার ক্ষমতাও।

মুখ্যমন্ত্রীর মত, এই বিলের মাধ্যমে ইডি-সিবিআইয়ের মতো সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচিত রাজ্য সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা হচ্ছে। এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে মমতা লিখেছেন, ‘সাধারণ মানুষের দেওয়া ভোটে সরকার তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াকেই তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। অপরিসীম ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে ইডি-সিবিআইয়ের হাতে, যাদের সুপ্রিম কোর্ট খাঁচাবন্দি তোতা বলেছিল! সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকেই ধসিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতেই যাবতীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে।’

Advertisement

বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, যে কোনও মূল্যে কেন্দ্রের নয়া বিলকে আটকাতে হবে। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে বাঁচানোর সময় এসেছে। গণতন্ত্র, আদালতের ক্ষমতা কেড়ে নিলে মানুষ ক্ষমা করবে না।’ তাঁর ধারণা, কেন্দ্রের এই বিল আসলে দেশের গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করার চক্রান্ত। এই পরিস্থিতিকে ‘জরুরি অবস্থার চেয়েও বেশি কিছু’ বলে মন্তব্য করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা কোনও সংস্কার নয়। বরং এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে বিচারব্যবস্থার আর কোনও স্বাধীনতাই থাকবে না। এটা বিচার ব্যবস্থাকে দমানোর চেষ্টা। সাংবিধানিক রক্ষাকবচ নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। এই বিলের উদ্দেশ্যই হল— এক ব্যক্তি, এক দল এবং এক সরকারের হাতেই যাবতীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়া।’

Advertisement

এদিন লোকসভায় বিল পেশের আগেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একে ‘অমানবিক এবং স্বৈরাচারী’ বিল বলে আক্রমণ শানিয়েছেন লোকসভায় তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর সাফ বক্তব্য, বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে ভারতের আত্মা বিক্রি করে দেওয়া! সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে সাংসদ অভিষেক লিখেছেন, ‘এখনও পর্যন্ত পাক অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধার করার সাহস দেখাতে পারেনি কেন্দ্র।

মুখে বড় বুলি আওড়ালেও, ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সীমান্ত সুরক্ষা এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কোনও বাস্তবিক সংকল্প দেখা যায় না। সংবিধানসম্মত দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে এই সরকার কেবল ক্ষমতা, অর্থ এবং নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করতে ব্যস্ত, কোনও জবাবদিহিতা ছাড়াই!’ সুদীর্ঘ পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘জনগণকে স্বস্তি দেওয়া, কৃষক-শ্রমিক-গরিবদের উন্নয়নের পথে কাজ করা তো দূরের কথা, দেশকে রক্ষা করার দায়িত্বও সরকার পালন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে এসআইআর (ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন) চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্তে ব্যর্থ হয়ে, এখন সরকার আরেক পন্থা অবলম্বন করছে। এর উদ্দেশ্য বিরোধী নেতাদের টার্গেট করা, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা এবং রাজ্য সরকারগুলিকে ভাঙতে জনগণের রায়কে বিকৃত করা।’

কেন্দ্র সরকারকে ‘জনবিরোধী’, ‘কৃষকবিরোধী’, ‘গরিববিরোধী’ বলে উল্লেখ করে তাঁর কটাক্ষ, ‘বিলের অর্থ সংবিধানকে বিক্রি করে দেওয়া এবং ভারতকে কয়েকজন অযোগ্য, মোহগ্রস্ত স্বৈরাচারীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে চালানোর অনুমতি দেওয়া!’ তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের কটাক্ষ, ‘এই বিল কেবল বিরোধীদের অধিকার খর্বের নয়, বিজেপির শরিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য! যারা শরিক রয়েছেন, তাঁরাও যদি মোদী-শাহর কথা না শোনেন, তাহলে ঘ্যাচাং ফু! গলা কেটে নাও!’

বুধবার বিকেলের শেষে দিল্লিতেই সাংবাদিক বৈঠক করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে অমিত শাহের উদ্দেশে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন অভিষেক, ‘৩০ দিন নয়, ১৫ দিন সময় নিন। এই বিল সমর্থন করবে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু একটাই শর্ত, যদি অপরাধ প্রমাণিত না হয়, তাহলে যে আধিকারিক আটক করেছেন, তাঁকেও দ্বিগুণ সময় জেলে রাখতে হবে’। তিনি অমিত শাহের প্রতি কটাক্ষ করে বলেন, ‘দম থাকলে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। কিন্তু আপনারা তো গণতন্ত্রকেই ভয় পাচ্ছেন। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে এ বিল এনেছেন’। তিনি আরও বলেন, ‘৩০৩ থেকে

২৪০-এ নেমে এসেছে বিজেপি। এখন ক্ষমতা হারানোর ভয়েই এই বিল আনা হচ্ছে।’ তিনি মণীশ সিসোদিয়া থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়দের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘এই বিলের আসল উদ্দেশ্য, দুর্নীতির মামলায় ফাঁসিয়ে বিরোধীদলের মুখ্যমন্ত্রীদের পদ থেকে সরানো।’

ইডি-র প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, ‘৫৮৯২টি মামলার তদন্ত করছে ইডি, কিন্তু নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৮ টির। মাত্র ০.৩ শতাংশ সফল ইডি। তাহলে উদ্দেশ্য কী? দুর্নীতি রোখা নাকি বিরোধীদের ধ্বংস করা?’

নিজের দাবির সপক্ষে পরিসংখ্যান দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘বিজেপির ২৮জন মন্ত্রী বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ১৯জনের বিরুদ্ধে খুন, নারী নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুভেন্দু অধিকারী, হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধেও কোনও পদক্ষেপ নেই। আমাদের জন্য এক আইন আর বিজেপির জন্য অন্য আইন? তাহলে কি এই বিল শুধু বিরোধীদের জন্য?’ এখন দেখার অভিষেকের এই কড়া প্রতিক্রিয়ার কী জবাব দেয় বিজেপি।

Advertisement