ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনে কেন ২০০৩ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হচ্ছে ? কেন ২০২৫ সালের জানুয়ারির তালিকা ধরা হবে না ? বুধবার আদালতে এই বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন আবেদনকারীর আইনজীবী গোপাল শঙ্কর। আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি বলেন, ‘এক্ষেত্রে সমস্ত ভোটার তালিকা বাতিল করা যেত। কিন্তু কমিশন তা করছে না। তারা ২০০৩ সালকে একটি ‘মাইলফলক’ হিসেবে ধরে নিচ্ছে। তবে ২০০৩ সাল কেন ? কেন ২০২৫ সালের জানুয়ারির তালিকা ধরা হবে না – এই বিষয়ে আপনারা সওয়াল করতে পারেন।’ সম্প্রতি ভোটার তালিকার বিশেষ এবং নিবিড় সংশোধন করা হবে বলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নোটিস পাঠায় নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই এই বিষয় কমিশনের তরফে জানানো হয়। বুধবারের শুনানিতে সেই প্রসঙ্গ তোলেন আইনজীবী গোপাল শঙ্কর নারায়ণ।
আবেদনকারীর আইনজীবী গোপাল শঙ্করের সওয়াল ছিল, ‘সংবিধান সব ব্যক্তিকে ভোটার হওয়ার অধিকার দিয়েছে। কিন্তু কমিশন গণহারে নাম বাদ দিয়েছে। ভোট দেওয়া আমার অধিকার। কমিশন কী ভাবে ভোটারদের সঙ্গে এই রকম ছেলেখেলা করে ?’
Advertisement
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে বিহারের এসআইআর মামলার শুনেছেন বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ। এর আগে শনিবার সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হলফনামায় কমিশন এ নিয়ে নানা তথ্য জানিয়েছিল। সংশোধিত তালিকায় প্রায় ৬৫ লক্ষের বেশি নাম বাদ পড়লেও বিহারে এখন মোট ৭.২৪ কোটি ভোটার রয়েছেন বলে হলফনামায় জানানো হয়েছিল। কমিশন জানিয়েছে, অনেকেই প্রয়াত, বাকিরা এখন আর বিহারের বাসিন্দা নন। তালিকায় যাঁদের নাম থাকবে না তাঁদের কাছে আলাদা করে নোটিশ যাবে কমিশনের পক্ষ থেকে।
Advertisement
এদিন শুনানির শুরুতেই আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন ‘গত লোকসভা নির্বাচনে যাঁদের নাম ছিল, খসড়া তালিকায় তাঁদের মধ্যে অনেকের নাম বাদ গিয়েছে। কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ থাকলে ইআরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পরামর্শ নিন। অথবা নির্বাচন নিবন্ধন আধিকারিকের উচিত এই সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম আগের রায়গুলি খতিয়ে দেখা।
এরা আগে মঙ্গলবার আধার নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট নিজের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছিল। বুধবারে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি বলেন, ‘আধার কেন গ্রহণ করা হবে না তার বিপক্ষে যুক্তি আমরা বুঝতে পেরেছি। কেউ যদি বলত ওই ১১টি নথির সব চাই, তা হলে সেটা ভোটার বিরোধী হত। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে ১১টির মধ্যে যে কোনও একটি দেওয়ার কথা। তবে আপত্তি কোথায়?’
কেন ২০২৫ সালের জানুয়ারির তালিকা ধরা হবে না? বিষয়টি উল্লেখ করে মামলাকারীর আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের উদ্দেশে বিচারপতি বাগচির মন্তব্য, ‘এই এসআইআর প্রথম বারের জন্য করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সকল ভোটার তালিকা বাতিল করা যেত। কিন্তু কমিশন তা করছে না। তারা ২০০৩ সালকে মডেল হিসেবে ধরে নিচ্ছে।’ বিচারপতি বাগচী মামলাকারীর আইনজীবী গোপালকে বলেন, ‘২০০৩ সাল কেন? কেন ২০২৫ সালের জানুয়ারির তালিকা ধরা হবে না? আপনারা এই বিষয়ে সওয়াল করতে পারেন।’
তবে এসআইআরের সময় নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে শীর্ষ আদালতের তরফে। আরও আগে কেন এসআইআর করতে উদ্যোগী হয়নি শীর্ষ আদালত তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের পরে কি নিবিড় সংশোধন করা যেত না?
প্রসঙ্গত, দেশের শীর্ষ আদালতে বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন পরিচালনার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক আবেদনের শুনানি চলে।
আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল যে, নির্বাচন কমিশনের নাগরিকত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই এবং সেই সূত্রে তালিকার জন্য কোনও ভোটারকে অপসারণ করার অধিকার নেই।
এর আগের শুনানিতে, বিচারপতি সূর্য কান্তের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ স্বীকার করেছে যে, খসড়া তালিকা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ‘ভুল’ হতে পারে। তবে ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছার কথাও উল্লেখ করে শীর্ষ আদালত। যদিও আবেদনকারীদের আদালতের কাছে যুক্তি ছিল যে, এসআইআর-এর ফলে ভোটারদের ব্যাপক হারে বাদ যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আদালতের আগের দেওয়া ‘পদক্ষেপ’-এর আশ্বাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
Advertisement



