কিছু ধনীর হাতে জমছে দেশের সম্পদ এবং বাড়ছে গরিবের সংখ্যা। নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েও দেশের অর্থনীতির এই বেহাল অবস্থার কথা স্বয়ং জানালেন নীতিন গড়করি। আবার ‘ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি ডাটা বেস’-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে আর্থিক বিশেষজ্ঞ হার্দিক যোশী জানিয়েছেন, ‘এখন ভারতে ব্রিটিশ আমলের থেকে বেশি হারে গরিব বেড়েছে। দেশে আর্থিক বৈষম্য বেড়েছে। ফলে মাত্র এক শতাংশ ধনীর কাছে জমেছে দেশের ৪০ শতাংশ সম্পদ। অন্যদিকে দেশের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের হাতে রয়েছে সম্পদের মাত্র ৬.৪ শতাংশ। মন্ত্রী এবং আর্থিক বিশেষজ্ঞ যোশী দু’জনেই তাঁদের বিশ্লেষণে উদ্বেগজনক আর্থিক পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন। অবশ্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বা নীতি আয়োগের আর্থিক বিশ্লেষণে এই তথ্য মেলে না। উল্টে সম্প্রতি নীতি আয়োগ জোর গলায় দাবি করেছে, ‘দেশে দারিদ্র বাড়েনি, বরং কমে গিয়েছে বিপুল হারে।’
কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের কাজকর্ম নিয়ে দেশের নানা প্রান্তে বারবার অভিযোগ উঠেছে। ২০২৩ সালে খোদ ‘ক্যাগ’ (কম্পট্রোলার জেনারেল) সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ সামনে এলেছিল। তবু মোদী মন্ত্রিসভার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী ও আরএসএস-এর ঘরের ছেলে নীতিন গড়করিকে অনেকেই সম্ভ্রমের চোখে দেখেন। এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীই নাগপুরে এক সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও নীতি আয়োগের দাবিকে এক ধাক্কায় আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনলেন। তাঁর বক্তব্যের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল দারিদ্র ও অসাম্য নিয়ে আক্ষেপের সুর। কার্যত নিজের সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে গড়করি বলেছিলেন, ‘দেশে গরিবের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এই সময়ে দেশের সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে কিছু ধনীর হাতে। আমাদের কাজ হলো এই সম্পদের বিকেন্দ্রীয়করণ।
Advertisement
আমাদের অর্থনীতিতে সর্বত্র সমান বিকাশ হচ্ছে না। যেমন, গ্রামীণ ভারতে ৬৫-৭০ শতাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। অথচ দেশের মোট জিডিপি-র মাত্র ১২ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। প্রচুর সম্পদ তৈরি হলেও তা চলে যাচ্ছে ধনীদের হাতে।’ মোদী জমানায় এই দারিদ্র ও অসাম্য নিয়ে এই নিরাশার ছবিটি এতদিন পর্যন্ত দেখা গিয়েছে বিরোধীদের চোখ দিয়ে। এই অভিযোগ এবার নিজের সরকারকেই বিঁধলেন খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
Advertisement
দেশের অর্থনীতি দ্রুত পালটে যাচ্ছে। এই সময়ে জিএসটি এবং আয়কর আদায়ের পরিকাঠামোর পরিবর্তনে শুধু নজর রাখলে চলবে না। পালটে যাওয়া অর্থনীতিতে মানুষের উন্নয়নের দিকে নজর রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন গড়করি। শিল্প ও কৃষি বিকাশ, কর ব্যবস্থা, সম্পদের সমবন্টন, পরিকাঠামো উন্নয়নে যৌথ উদ্যোগের গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন মন্ত্রী, যার একটি ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেয় না মোদী সরকার। মোদীর অর্থনৈতিক অভিমুখে ধনীরা বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন বলে যে অভিযোগ গত ১১ বছর ধরে বিরোধীরা করে আসছে, মন্ত্রী গড়করির বক্তব্যে তারই স্বীকৃতি মিললো। অর্থনীতির পরিচালনায় মোদীকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী নরসিমারাও এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের উদার অর্থনীতির প্রশংসা করেন গড়করি।
গরিব মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধির মূল কারণ হলো, দেশের আর্থিক নীতির দৌলতে গরিব বাড়ছে। দেশের কর্পোরেটদের দাপটে ছোট শিল্প কারবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এতে কাজ হারিয়ে গরিব মানুষ আরও তলিয়ে যাচ্ছেন দারিদ্রের সমুদ্রে। সৃষ্ট সম্পদ সাধারণের হাতে তুলে না দিতে পারলে এই বৈষম্য থেকেই যাবে।
Advertisement



