শুক্র ও শনিবার আর্জেন্টিনা সফর সেরেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর্জেন্টিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বহুদিনের। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও গিয়েছিলেন এই দেশে। ১৯২৪ সালে পেরুতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেবার দক্ষিণ আমেরিকা যাত্রার সময় ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হন তিনি। পেরু যাত্রা স্থগিত রেখে সেই সময় তাঁকে আর্জেন্টিনাতেই থেকে যেতে হয় কিছুদিন। সেই ঘটনার ১০০ বছর পর রবীন্দ্র- স্মৃতিধন্য ‘ভিলা ওকাম্পো’-তে গিয়ে তাঁর আবক্ষ মূর্তিতে মালা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেস থেকে মোদী এক্স হ্যান্ডলের এক পোস্টে লেখেন, ‘বুয়েনস আইরেসে আমি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। ১৯২৪ সালে গুরুদেব আর্জেন্টিনা সফরে এসেছিলেন এবং তাঁর সেই সফর এখানকার বহু মানুষের, বিশেষ করে শিক্ষাবিদ ও ছাত্রছাত্রীদের মনে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। ভারতে আমরা, আমাদের জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে গুরুদেবের অবদানের বিষয়ে গর্বিত। শিক্ষা ও জ্ঞানলাভের বিষয়ে তাঁর গুরুত্ব আরোপও বিশেষ প্রেরণাদায়ক।’
Advertisement
১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ প্রায় দু’মাস থেকেছিলেন আর্জেন্টিনায়। সেই সময় আর্জেন্টিনার তরুণী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স ৬৩ বছর। অসুস্থ অবস্থায় তাঁর পক্ষে বেশিদিন বিদেশে থাকা সম্ভব হত না, যদি না এগিয়ে আসতেন ভিক্টোরিয়া। প্লাতা নদীর ধারে তাঁরই বাগানবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই সময় সৃজনশীলতার দিক থেকেও কিছুটা নিভে আসছিলেন কবি। অনেকে মনে করেন, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সান্নিধ্যে কবি আবার সৃষ্টির পথে হাঁটতে শুরু করেন।
Advertisement
অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠার পরে ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই কাব্যগ্রন্থের পান্ডুলিপিতে কাটাকুটি লক্ষ্য করেছিলেন ওকাম্পো, যা পরবর্তী সময়ে ভারতীয় চিত্রকলার নিদর্শন হয়ে থেকেছে। ওকাম্পোর উদ্যোগেই প্যারিসে চিত্রকর রবীন্দ্রনাথের প্রদর্শনী হয়েছিল। ওকাম্পো নিজেও তখন সেখানকার শিল্প সাহিত্যের জগতে ফ্রান্সের বিশিষ্টজনেরা রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলাকে সাদরে গ্রহণ করেন। ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর ‘বিজয়া’ ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে।
এবার পঞ্চদেশীয় সফরে বেরিয়ে আর্জেন্টিনায় পৌঁছে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তিতে তাঁর মালা দেওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে।
Advertisement



