• facebook
  • twitter
Monday, 8 December, 2025

সংক্রামক জীবাণু ছড়িয়ে মার্কিন কৃষিব্যবস্থাকে ধ্বংসের চক্রান্ত, গ্রেপ্তার দুই চিনা গবেষক

এফবিআইয়ের দাবি, প্রথমে ধৃতরা অস্বীকার করলেও জেরার মুখে দু’জনেই স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁরা লুকিয়ে আমেরিকায় ‘ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারাম’ নিয়ে এসেছিলেন।

এইভাবেই চলছিল বিপজ্জনক ছত্রাক চোরাচালান। নিজস্ব গ্রাফিক্স

আমেরিকায় বিপজ্জনক ‘প্যাথোজেন’ নিয়ে ঢুকতে গিয়ে এফবিআইয়ের হাতে ধরা পড়ে গেলেন দুই চিনা গবেষক। মঙ্গলবার ডেট্রয়েট মেট্রোপলিটন বিমানবন্দরে ধরা পড়ে যান ওই যুগল। ‘বিষাক্ত ছত্রাক’ দিয়ে আমেরিকার কৃষিব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ওই দুই চিনা নাগরিক তথা গবেষককে গ্রেপ্তার করেছে আমেরিকা। ধৃতদের একজনের নাম ইউনকিং জিয়ান। তিনি চিনের এক মহিলা গবেষক এবং তাঁর প্রেমিক জুনিয়ং লিউও। তিনিও চিনের আরও একজন গবেষক।

এফবিআইয়ের দাবি, প্রথমে ধৃতরা অস্বীকার করলেও জেরার মুখে দু’জনেই স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁরা লুকিয়ে আমেরিকায় ‘ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারাম’ নিয়ে এসেছিলেন। তবে ইউনকিংয়ের দাবি, গবেষণার জন্যই তাঁরা ওই প্যাথোজেন সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। এই ঘটনার পর এফবিআইয়ের ডিরেক্টর কাশ পটেল খবরটি নিশ্চিত করে তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘আমেরিকায় এক জন চিনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে এফবিআই। ধৃত ওই মহিলা দেশে একটি বিপজ্জনক প্যাথোজেন পাচার করছিলেন বলে অভিযোগ।’

Advertisement

পটেল জানিয়েছেন, ধৃত মহিলার নাম ইউনকিং জিয়ান। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইউনকিংয়ের কাছ থেকে ‘ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারাম’ নামে একটি বিপজ্জনক প্যাথোজেন উদ্ধার হয়েছে, যা তিনি লুকিয়ে চিন থেকে আমেরিকায় নিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ। ইউনকিংযার সঙ্গেই ধরা পড়েছেন ইউনকিংয়ের প্রেমিক জুনিয়ং লিউও। তাঁর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। চিনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই প্যাথোজেন নিয়ে গবেষণা করতেন জুনিয়ং।

Advertisement

এফবিআইয়ের ডিরেক্টর কাশ পটেলের কথায়, ‘এই প্যাথোজেনের প্রভাবে ‘হেড ব্লাইট’ নামে একটি রোগ হয়, যা গম, বার্লি, ভুট্টা এবং ধানের মতো কৃষিজাত পণ্যের পাশাপাশি মানুষ কিংবা গবাদি পশুর স্বাস্থ্যের উপরেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। এই প্যাথোজেন প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতির জন্য দায়ী।’

এফবিআই দাবি করেছে, তারা চিনা গবেষক লিউয়ের ফোন ঘেঁটে একটি প্রতিবেদনের লিঙ্ক পেয়েছে। যার শিরোনাম, ‘প্ল্যান্ট-প্যাথোজ়েন ওয়ারফেয়ার আন্ডার ক্লাইমেট কন্ডিশন্‌‌স।’ অভিযোগ, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইউনকিং অবৈধ ভাবে ওই ছত্রাক নিয়ে গবেষণা করেছেন। এ বিষয়ে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে তারা।

ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা এফবিআই জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে একজন চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। ৩৩ বছরের ইউনকিং জিয়ান এবং ৩৪ বছরের জুনিয়ং লিউওয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, পাচার, ভুয়ো তথ্যপ্রদান এবং ভুয়ো ভিসা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে আমেরিকা। জিয়ান এখন আমেরিকার হেফাজতে রয়েছে। তবে লিউওয়ের গ্রেপ্তারি নিয়ে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি। তবে আমেরিকার বিচার বিভাগের দাবি, দুই চিনা নাগরিক ‘ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারাম’ নামে একটি বিপজ্জনক প্যাথোজেন নিয়ে আমেরিকায় ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল ‘কৃষি-সন্ত্রাস’-এর।

জানা গিয়েছে, ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারাম নামের যে বিপজ্জনক ছত্রাক উদ্ধার হয়েছে বলে আমেরিকা দাবি করেছে, ফসলে তার মারাত্মক কুপ্রভাব রয়েছে। একে কৃষির উপর সন্ত্রাসবাদী হানার চেষ্টা বলে আখ্যা দিয়েছে তারা। ওই ছত্রাকের কোটি কোটি টাকার কৃষিসম্পত্তি ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। কারণ এই ছত্রাকের প্রয়োগে ধান, গম, বার্লি, ভুট্টা ইত্যাদি ফসলে ‘হেড ব্লাইট’ হয়। তাতে শস্যের বীজ বা শস্যের মুকুল কিংবা গোড়া নষ্ট হয়ে যায়। আমেরিকার অভিযোগ, চিনা গবেষকদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ছত্রাকে যে উপাদান থাকার আশঙ্কা করা হয়েছে, তা কৃষিব্যবস্থার জন্য ভয়ঙ্কর।

তবে শুধু শস্যই নয়, কৃষক থেকে গবাদি পশুর স্বাস্থ্যের উপরেও মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারামের। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ওই ছত্রাকের জন্য মানব শরীরে নানা অসুখ হতে পারে। এই অসুখ প্রথমে বমির মতো উপসর্গ দিয়ে শুরু হয়। এর পর ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারিমের প্রভাবে যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ওই ছত্রাক সংক্রমিত শস্য দিয়ে যে খাবারই রান্না করা হোক না কেন, তা বিষাক্ত হয়ে যায়। এমনকি, প্রজনন ক্ষমতাও কমতে পারে।

উল্লেখ্য, কোনও দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে অনেক সময় ‘টার্গেট’ করে থাকে শত্রুদেশ। এর মূল কারণ হল, ওই আক্রমণ শনাক্ত করা কঠিন। আর বিষাক্ত খাদ্যবস্তুকে সহজেই অস্ত্রে পরিণত করতে পারে তারা। ‘কৃষি-সন্ত্রাস’কে বলা হয় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার অন্যতম উপায়।

তবে এই ধরনের নজির মার্কিন মুলুকেই যে প্রথম নজরে এসেছে, তা নয়। ২০১৬ সালে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা বা ডিআরডিও একটি রিপোর্টে জানায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের একটি বিষাক্ত ছত্রাক পাওয়া গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দু’টি জেলায়। পরে কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ করে। ওই দুই জেলায় তিন বছরের জন্য গম চাষ নিষিদ্ধ করা হয়। তা ছাড়া, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলির আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে চাষবাস নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।

Advertisement