• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

সমস্ত অভিযোগ নস্যাত করে পাল্টা ভারতকেই নিশানা সইফুল্লার

‘সব ভারতের সাজানো নাটক’

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তর সূত্রে খবর, পহেলগামে হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী বা মাস্টারমাইন্ড ছিল সইফুল্লা খালিদ ওরফে সইফুল্লা কাসুরি। তার নির্দেশেই পাঁচ-ছয় জন জঙ্গি মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় গুলি চালায়, প্রাথমিকভাবে এমনটাই মনে করা হচ্ছিল। এবার তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ নস্যাত করে পাল্টা ভারতকে দুষেছে সইফুল্লা। সইফুল্লার কথায়, ‘সব ভারতের সাজানো নাটক’।  

সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সইফুল্লার একটি ভিডিও। সেখানে সইফুল্লা দাবি করে পহেলগামে হামলার সঙ্গে পাকিস্তান বা তার কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনের যোগ নেই। একই সঙ্গে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধেও চড়া সুর শোনা যায় সইফুল্লার গলায়। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করি আমরা। এই হামলার অজুহাতে ভারতীয় মিডিয়া আমাকে দায়ী করেছে। পাকিস্তানকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। এটি একটি দুঃখজনক বিষয়। ভারত পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চায়।’ তার দাবি, ‘ভারতই কাশ্মীরে ১০ লক্ষ সেনা পাঠিয়ে যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করেছে। ভারত নিজেই পহেলগামে আক্রমণ চালিয়েছে। এটা ওদের নাটক। এর জন্য তারাই দায়ী। এটা ওদের ষড়যন্ত্র। এর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও সম্পর্ক নেই।’  
পহেলগামে জঙ্গি হামলার দায় অস্বীকার করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফও। বুধবার তিনি দাবি করেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে হামলার ঘটনায় তাঁদের কোনও হাত নেই’। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশে অস্থিরতার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ভারতকেই দায়ী করেছেন তিনি। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এদিন বলেন,  ভারতের অভ্যন্তরীণ ফোর্সই কাশ্মীরে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

Advertisement

পহেলগামের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ তথা টিআরএফ। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক অস্থিরতার আবহে এই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছিল। পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-এ-তৈবার অন্যতম সংগঠন হয়ে ওঠে টিআরএফ। এদিকে লস্কর-ই-তৈবার অন্যতম প্রধান সইফুল্লা। তাই টিআরএফ হামলা চালালেও এই পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ড সইফুল্লা, এমনই মনে করা হচ্ছিল গোয়েন্দা সূত্রে। কিন্তু সে সব জল্পনা উড়িয়ে দিল সইফুল্লা নিজেই।

সইফুল্লা লস্করের অন্যতম প্রধান তথা ভরতের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকাভুক্ত হাফিজ সইদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিল। সূত্রের খবর, পাক সেনাবাহিনীতেও যথেষ্ট প্রভাব ছিল তার। পহেলগাম হামলার মাস দুয়েক আগে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের কাঙ্গলপুরে তাকে দেখা গিয়েছিল। সেখানে পাক সেনার একটি বড় ব্যাটেলিয়ন ছিল। ওই ব্যাটেলিয়নে বক্তৃতা করার জন্য সইফুল্লাকে ডেকেছিলেন পাক সেনার কর্নেল জাহিদ জারিন। সেনাকর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি করতেই নাকি তাকে ডাকা হয়েছিল। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সইফুল্লার সেই বক্তৃতার বেশির ভাগ অংশ জুড়েই ছিল ভারতবিরোধী বার্তা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালানোর পরামর্শও ছিল সেই বার্তায়। 

Advertisement

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়াতেও আরও একটি সভার আয়োজন করেছিল পাক সেনা। সেই সভাতেও সইফুল্লা ভারতবিদ্বেষী বক্তৃতা করে। পাশাপাশি, কাশ্মীর দখলের হুঙ্কারও দেয়। এরপরই পহেলগামে হামলা হয় যা সইফুল্লারই মস্তিষ্কপ্রসূত বলই অনুমান গোয়েন্দাদের। গোয়েন্দাদের অনুমান, সইফুল্লাকে সাহায্য করে পাক সেনা ও গুপ্তচর সংস্থা। এই হামলায় হাত ছিল পাক জঙ্গি সংগঠনগুলিরও। 

এদিকে পহেলগামের হামলার পর ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে পাঁচ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দিল্লি। বুধবার বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আটারি সীমান্ত। পাকিস্তানিদের ভারতে প্রবেশও নিষিদ্ধ করেছে ভারত। পাকিস্তানে অবস্থিত ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনারকেও দেশে ফেরানো হবে। ভারতে বর্তমানে যে সব পাকিস্তানিরা রয়েছেন, তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন বিদেশ সচিব। 

Advertisement