পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বুধবার রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচ পদক্ষেপ করেছিল ভারত, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু চুক্তি বাতিল, আটারি সীমান্ত বন্ধ, পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিলের মতো একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের অন্যতম শীর্ষ কূটনীতিককে সমন পাঠায় সাউথ ব্লক। দিল্লির তরফে স্পষ্ট করা হয়, সাধারণ নাগরিক থেকে কূটনীতিক – ভারতে পাকিস্তানি মাত্রই ‘অবাঞ্ছিত’। সরকারের কোনও মন্ত্রকের তরফে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে একাধিক সংবাদ সংস্থা এই দাবি করেছে।
ভারতে থাকা পাক কূটনীতিক সাদ আহমেদ ওয়ারাইচকে বুধবার মধ্যরাতে নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে তাঁর হাতে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার নোটিস ধরানো হয়েছে। সূত্রের দাবি, নয়াদিল্লির পাক দূতাবাসে থাকা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা, বায়ু উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত’ (পার্সোনা নন গ্রাটা) বলে সম্বোধন করে সাতদিনের মধ্যে দেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। ভারতে তাঁদের উপস্থিতি যে কাম্য নয়, বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
পহেলগামে পর্যটকদের উপর হামলার পরেই বৈঠকে বসে ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে এই বৈঠক চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ছিলেন এই বৈঠকে। দীর্ঘ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি।
Advertisement
বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত সিন্ধু জলচুক্তি আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হল। শুধু তাই নয়, নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনের আধিকারিকদেরও এক সপ্তাহের মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। অবিলম্বে বন্ধ করা হবে ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত। বৈধ কারণে যাঁরা ওই পথ দিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের ১ মের মধ্যে ভারতে ফিরতে হবে। আগামী দিনে পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করল ভারত। বর্তমানে যেসব পাকিস্তানিরা ভারতে রয়েছেন তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।
পাকিস্তানের সামরিক উপদেষ্টাদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করার পাশাপাশি সে দেশের ভারতীয় দূতাবাসের সদস্য সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হচ্ছে বলে জানায় ভারত। এদিকে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকেও একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেটি মূলত পাকিস্তানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটির বৈঠক। ভারত যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক কেবল নয়, অর্থনৈতিক বিষয়টিও সরাসরিভাবে ধাক্কা খাবে। মূলত তা নিয়েই আলোচলা হবে বৈঠকে।
ইতিমধ্যেই বৈসরনের ঘটনাস্থল থেকে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছে ফরেনসিক টিম। তদন্ত শুরু করে দিয়েছে এনআইএ। গোটা এলাকার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা হয়েছে। সমস্ত পর্যটককে পহেলগাঁওয়ের বাইরে বার করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে বুকিং যাঁদের ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং এক জন নেপালি নাগরিক রয়েছেন।
Advertisement



