প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। শুধু তাই নয়, এই নিয়ে গোপন বৈঠকেও বসে কেন্দ্র। পাকিস্তান সীমান্তের কাছে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প শুরু করছে আদানি গোষ্ঠী। সীমান্তের কাছে এই জাতীয় নির্মাণে বেশ কিছু বিধিনিষেষ রয়েছে। অভিযোগ, এই প্রকল্পের জন্য নিরাপত্তা বিধি শিথিল করা হয়েছে। একটি বিদেশি সংবাদ পত্র গোটা বিষয়টি ফাঁস করেছে। এই সংবাদ প্রকাশ্যে আসতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে কংগ্রেস। এদিকে কেন্দ্র বা আদানি গোষ্ঠী কেউই এই প্রতিবেদন এবং কংগ্রেসের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, সরকারের এই পদক্ষেপ জাতীয় সুরক্ষাকে বিপন্ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে জবাব দিতে হবে, আমাদের জাতীয় সুরক্ষার সঙ্গে আপস করে এই জাতীয় পদক্ষেপ কেন নেওয়া হয়েছে? সূত্রের খবর, পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে কচ্ছের খাভদায় একটি সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন এবং বিশ্বের বৃহত্তম পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি পার্ক তৈরি করছে আদানি গ্রুপ। এর আগে সিকিউরিটি প্রোটোকল অনুযায়ী, এই অঞ্চলে কোনও নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হত না। তবে গুজরাত সরকার ২০২৩ সালের এপ্রিলের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে (পিএমও) সীমান্তের নিকটবর্তী জমিতে এই প্রকল্পে আওতায় নির্মাণের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছিল।
Advertisement
বিদেশি সংবাদ পত্রে প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ২০২৩ সালের ২১ এপ্রিল দিল্লিতে একটি ‘গোপন বৈঠক’ ডাকা হয়েছিল। সেই সময় গুজরাত সরকারের লিজ দেওয়া জমির মালিক ছিল সোলার এনার্জি কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এসইসিআই)। ২০২৩ সালের ৮ মে-র মধ্যে কেন্দ্র পরিকাঠামো প্রকল্পের অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রোটোকল পরিবর্তন করেছিল। অভিযোগ, কেন্দ্রের নির্দেশেই গুজরাত সরকারকে জমি ফেরত দেয় সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ তৈরির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সোলার এনার্জি কর্পোরেশন। এর পর তা আদানিকে তুলে দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে আদানি গোষ্ঠী কচ্ছের রণে থাকা জমি হাতে পায়। সূত্রের দাবি, বায়ু বিদ্যুৎকল এবং সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্যানেল বসানোর জন্য ৪৪৫ বর্গ কিলোমিটার জমি পেয়েছে আদানি গোষ্ঠী।
Advertisement
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ছদ্ম-জাতীয়তাবাদী চেহারা আরও একবার উন্মোচিত হয়েছে। এক্স হ্যান্ডেকে তিনি লিখেছেন, নরেন্দ্র মোদীজি, আপনি বেসরকারি কোটিপতিদের সুবিধা দেওয়ার জন্য আমাদের সীমান্তে জাতীয় সুরক্ষা বিপন্ন করেছেন। এটা কি সত্যি যে আপনি সীমান্ত সুরক্ষা বিধি শিথিল করে পাকিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে থাকা জমি আপনার ‘প্রিয় বন্ধুকে’ উপহার দিয়েছেন? কংগ্রেস সভাপতি প্রশ্ন তোলেন, এটা কি সত্যি নয় যে আপনার সরকার কেবল ভারত-পাকিস্তান সীমান্তেই নয়, বাংলাদেশ, চীন, মায়ানমার এবং নেপাল সংলগ্ন জমিতেও এই জাতীয় নিয়ম শিথিল করেছে, যার ফলে আমাদের সীমান্ত সুরক্ষা বিপন্ন হয়েছে? কেন আপনি ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় একটি বিশাল বেসরকারি প্রকল্পের অনুমতি দেবেন, যার ফলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের কৌশলগত সুবিধা হ্রাস পাবে? কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, দেশের সমস্ত সম্পদ প্রধানমন্ত্রীর বন্ধুর হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া এত চরমে পৌঁছেছে যে সীমান্তের নিরাপত্তা বিধিও বদলে দেওয়া হচ্ছে।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে নিয়ম বদলের প্রয়োজনীয়তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, সামরিক বিশেষজ্ঞরা দশকের পর দশক ধরে আমাদের জাতিকে রক্ষা করে আসছেন, তারা কি শুধুই হাতের পুতুল, যাদেরকে কোণঠাসা করা যায়? মোদী সরকারের স্বজনপ্রীতি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে ভারতের বৃহত্তম সৌর প্রকল্প নির্মাণের অনুমতি দেওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং সমস্ত প্রতিষ্ঠিত সামরিক নিয়মের পরিপন্থী।
Advertisement



