‘সামাজিক ন্যায়ের মাধ্যমেই বেঁচে থাকে বিজেপি’, দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সামনে এমনই দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের দাবির সপক্ষে দেশের ৮০ কোটি আমজনতাকে বিনামূল্যে রেশন বিলি থেকে ৫০ কোটির বেশি মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উদাহরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী মোদী৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্থান পায় না বেকারত্বের প্রসঙ্গ, এমনই অভিযোগ বিরোধীদের।
তবে এই অভিযোগ কেবল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির জবানবন্দিতেই বর্তমানে সীমাবদ্ধ নেই, ভারতের অর্থনৈতিক পশ্চাদগামিতার খতিয়ান উঠে আসছে একাধিক গবেষণাতেও। বুধবার সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে মোদী সরকারকে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে একাধিক প্রশ্নবাণ ছুঁড়েছে বাংলার শাসকদল।
Advertisement
গবেষণা বলছে, দেশের প্রত্যেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ। তৃণমূলের সাফ অভিযোগ, যে ভারত স্বপ্ন দেখাতে শেখায়, আজ সেই ভারতে ধনীরা ক্রমাগত ধনী এবং দরিদ্ররা ক্রমাগত দরিদ্রই হচ্ছেন। তৃণমূলের ভাষায়, ‘এটাই কি সবকা সাথ সবকা বিকাশের নজির? কৃষি থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে কম বিনিয়োগ, দেশীয় শিল্পের অবনমন, মোটর সাইকেলের বদলে চার চাকার বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়ে উৎসাহ প্রদান, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জেরে নাজেহাল আমজনতা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সরকার কেবল
ধনীদের সরকার।’
Advertisement
নিজেদের অভিযোগের সমর্থনে তৃণমূলের তরফ থেকে যে ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে তাতে বিভিন্ন অর্থনৈতিক গবেষণার একাধিক তথ্য ফুটে উঠেছে। অক্সফাম ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালে অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতার সময়ে দেশে উৎপাদিত সম্পদের মাত্র ১২ শতাংশই কুক্ষিগত ছিল ধনী ১ শতাংশের হাতে। তবে স্বাধীনতার সত্তর দশকের মধ্যে এই চিত্রের আমূল বদল ঘটেছে। মোদী সরকারের আমলে দেশে উৎপাদিত সম্পদের ৭৩ শতাংশই কুক্ষিগত হয়েছে মাত্র ১ শতাংশের হাতে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশের কোটিপতিদের সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ২৮০%। যেমন ২০২২ সালে আদানির সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৪৬ শতাংশ৷ কিন্ত অন্যদিকে, ৩০৭ মিলিয়ন ভারতীয় এখনও পর্যন্ত খাদ্য সংকটে ভোগেন এবং ২২৪ মিলিয়ন ভারতীয় ক্ষুধার্তই থাকেন। বিভিন্ন অর্থনৈতিক গবেষণা বলছে, ভারতের কর ব্যবস্থাই এই দেশের দারিদ্রের অন্যতম কারণ।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ-এর জিএসটি পরিকাঠামো নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্রদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। জিএসটির ৬৪ শতাংশ এসেছে সমাজের নিচু স্তরের ৫০ শতাংশের থেকে এবং উঁচু স্তরের ১০ শতাংশের থেকে এসেছে মাত্র ৪ শতাংশ জিএসটি৷ অর্থাৎ একাধিক গবেষকের মতানুসারে, ভারতের কর ব্যবস্থায় অধিক উপার্জনকারী ব্যক্তিকে কম এবং কম উপার্জনকারী ব্যক্তিকে তুলনামূলক বেশি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর প্রদান করতে হয়। যার ফলে গোটা ভারত জুড়ে আয় সাম্যের ক্ষেত্রে বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে মোদী সরকারের আমলে।
এই সার্বিক আর্থিক বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে দেশে আয় সাম্য গড়ার জন্য কেন্দ্র সরকারের কাছে আর্জি তৃণমূলের।
Advertisement



