অনির্বাণ চৌধুরী
বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার সফল পরীক্ষার্থীদের নামের তালিকা সগ্রহ করেন তাপস। তাপস সিকদার। রিটায়ার্ড সরকারি কর্মচারী। এটা তাঁর নেশার মতো। কিছু দিন আগে পর্যন্ত বাস ট্রাম ঠেঙিয়ে গলদঘর্ম হয়ে পরীক্ষার নিয়ামক সংস্থার অফিসে পৌঁছতেন। সূর্যদেব, বরুণদেব… তোয়াক্কা করতেন না কাউকেই। ফল প্রকাশের তারিখ জেনে যেতেন আগেভাগেই। কিভাবে যেন! রোদ, ঝড়, জল উপেক্ষা করে সেই দিনটাতে পৌঁছে যাওয়া চাই। কখনও পাবলিক সার্ভিস কমিশন, কখনও স্টাফ সিলেকশন কমিশন.. এইসব। তখনও মোবাইলের মুশকিল আসান হাতে হাতে ঘোরাফেরা করা শুরু করেনি। অগত্যা পকেটে ছোট প্যাড, পেন। তালিকার দু’একটা কলাম টুকে নিতেন, নির্ভুল। তারপর সে ফর্দ বগলদাবা করে বাড়ি ফেরা। রাতে অঙ্ক করতে বসতেন। গভীর মনযোগ। প্যাড, পেন, ক্যালকুলেটার। ইদানিং তাপস সিকদার টেকস্যাভি হয়েছেন। টেকনোলজি ব্যাটা নিজেও পা ফেলেছে বেশ কয়েক কদম। ঊর্ধ্বমুখ। খাড়া সিঁড়ি। এখন আর জার্নির ধকল বইতে হয় না। বাস, ট্রামের ঝক্কি নেই। ঘরে বসে সংস্থার ওয়েবসাইটে একটু ঘোরাঘুরি। ব্যাস। রেজাল্টের তারিখ জানতে ওই ইঁদুর বাবাজীর কানে একবার চাপ দিলেই হল। এক ক্লিকে ফলাফল বেচারা গুটিগুটি পায়ে নেমে আসে নিজের মেশিনে। রাতে কম্পিউটারেই হিসেব নিকেশ। নির্দিষ্ট ফোল্ডারে সেভ করে রাখা। এ ব্যাপারে তাপস সিকদার অত্যন্ত সিরিয়াস। তাঁর বয়সের সঙ্গে ঠিক যেন মানানসই নয়। জীবনভর কড়া অনুশাসন শেষে মানুষ এই বয়েসে একটু ঢিলেঢালা হতে চায়। এ নিয়ম তাপস সিকদারের ক্ষেত্রে খাটে না। তিনি ব্যতিক্রম। যেন মরণ বাঁচন জড়িয়ে আছে এই ডেটা কালেকশান, ডেটা প্রসেসিংয়ের সঙ্গে। মালতী বুঝে পান না। শেষে বুড়ো বয়সে এসে বর বেচারার মাথাটাই কি বিগড়ে গেল? বর মানেই চিরায়ত বেচারা। মালতী জানেন। কিন্তু বুড়ো বরের বেচারাতর হবার কথা ছিল। এমনটাই শুনেছিলেন। মিলছে না।
Advertisement
সব আহৃত তথ্য, সব সযত্নলালিত অনুমান যে মিলে যাবে এমন কথা নেই। তবু। হঠাৎ ঝাঁপ ফেলে দেওয়া রোজগারের জগৎ, সঙ্কুচিত বন্ধুবৃত্ত, কোনওরকম আগাম ইত্তেলা ছাড়াই পড়ে যাওয়া আশেপাশের দু’চারটে উইকেট… এই সব মিলেমিশে বৌয়ের গায়ে আরও বড় করে হেলান দেয় বুড়ো বয়স। সকাল বিকেল নৈমিত্তিক খিচিমিচিটুকু হৃত সাম্রাজ্যের রেশ মাত্র। প্রবল শ্বাস নিয়ে ফেলে আসা দিনের আনন্দ-গন্ধ ফিরে পাবার ব্যর্থ চেষ্টা। বাকিটুকু বউ-ন্যাওটা বুড়ো বর। মিনিটে মিনিটে ডাক। বৌ অতিষ্ঠ হলেও অব্যহতি নেই। পিঠ চুলকোনোর হাত কই, হাওয়াই চপ্পলের ডান পাটি কই, কোমরের স্পন্ডিলোসিসের বেল্ট কই, চশমার খাপ কই…। কিন্তু তপন সিকদারের ব্যপারটা একদম আলাদা। সকাল সন্ধে স্নিকার পায়ে হনহন। পাক্কা দু’কিলোমিটার। প্রথম দিকে মাথার ঘাম টপটপিয়ে পায়ে। পরে অঝোর ধারায়। মালতী মালতী ডাক নেই। মাফলার, মাঙ্কিক্যাপ, প্রেশারের ওষুধ চাওয়া নেই। সব নিজে হাতে নিয়ে নেওয়া। মালতীর মনে কুয়াশার আলপনা। থেকে থেকে কালো মেঘ। বুড়ো বয়েসে আবার প্রেমে ট্রেমে পড়ল না কী রে বাবা! তেমন দোষ তো ছিল না কোনওকালে। ছোঁকছোঁকানি থাকলে মেয়েদের চোখ এড়ায় না। যা কাঠখোট্টা লোক। অন্য কেউ সামলাতে নিলে টের পেত। একবার ঘাড়ে পড়লে দু’দিনে ফেরত দিয়ে যেত। তবু মনের মধ্যে একটা কাঁটা। খচখচ। এর সঙ্গে গোদের উপর বিষফোঁড়া ওই চাকরির পরীক্ষার ফল জোগাড় করার বাতিক। একেবারে জাঁকিয়ে বসেছে। কী যে হয় ওই সব ছাইপাঁশ দিয়ে! সঙ্গে উদ্ভট সব অঙ্ক। সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়ে নেবার কথা ঘোরাঘুরি করে মালতীর মাথায়। বলতে ভরসা হয় না। বর যদি আরও দূরে সরে যায়। মেয়েদের শতেক জ্বালা।
Advertisement
ছেলেটাও হয়েছে তেমন। সারাদিন বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে বসে আছে। খেলাধুলো নেই, আনন্দ ফুর্তি নেই, বন্ধু বান্ধব নেই…। শুধু বই আর গুচ্ছের ম্যাগাজিন। বিড়ি সিগারেট খেতে যে দু’চারবার ছাদে যাবে সে বালাইও নেই। চাকরির পরীক্ষা কি ভূভারতে আর কেউ দিচ্ছে না? তবে মালতীর যতটা রাগ বরের উপরে তার ছিটেফোটাও ছেলের উপর নেই। মায়েরা বাই-ডিফল্ট পুত্রবৎসল, পুত্রপন্থী। কিন্তু এ পক্ষপাত যুক্তিনিষ্ঠ। একেই তরু বেশি বয়সের সন্তান। যখন হয়েছে মালতী আটত্রিশ। তাপস সিকদার ছেচল্লিশ। কূল উপচেছে আদর, স্নেহ। চিরকাল। মায়ের। বাবারও। তরু লেখাপড়ায় খারাপ ছিল না। স্কুলের প্রথম দিকে দশের মধ্যেই থাকত। তারপর কী যে হল! পরীক্ষার খাতায় জানা প্রশ্ন ভুল করে দিয়ে আসতে থাকল। প্রথম প্রথম বকাঝকা দিতেন। বকা শেষ হলে কলঘরে গিয়ে চোখ মুছে আসতেন মালতী। প্রাণের বাড়া ছেলে। তাকে বকা কী আর চাট্টিখানি কথা? কিন্তু না বকলেও যে নয়। সারাদিন লেখাপড়া করছে। সব প্রশ্নের উত্তর জানা। কিন্তু পরীক্ষা এলে কী যে হয়! সব নাকি গুলিয়ে যায় তার। মেজ জ্যাঠামশাইয়ের পরামর্শে ডাক্তার দেখানো হল। মাথা খারাপের ডাক্তার। তরু আপত্তি করেনি। মালতী চুরমার হয়েছিলেন। তাপস সিকদারও। অমন লক্ষ্মী ছেলে। তার জন্য কিনা শেষে পাগলের ডাক্তার! লাভ অবশ্য হয়েছিল। নানা রকম পরামর্শ দিয়েছিলেন ডাক্তারবাবু। ‘ভাল করে ঘুমানো চাই, পড়া বার বার রিভিসান করা চাই, তারপর লিখে ফেলা চাই, মাঝে মাঝে ব্রেক চাই’ …হরেক ফিরিস্তি। তরু সব কথা শুনল। কিছুদিন সব ঠিকঠাক চলল। আবার যে কে সেই। পরীক্ষার আগের দিন থেকে সেই হাত পা ঠান্ডা। ওয়াক ওয়াক। মেধা, পরিশ্রমের সঙ্গে ফলের সাযুজ্য রইল না। বোর্ডের পরীক্ষায় মোটামুটি নম্বর হল। আজকাল মোটামুটিতে চিঁড়ে ভেজে না। মিডিওকার আর কাঠ-বেকার সমার্থক। পরীক্ষায় পাওয়া নম্বর অলঙ্ঘ্য মানদণ্ড। তরু এখন গ্র্যাজুয়েট। নিয়মিত চাকরির পরীক্ষা দেয়। খাটভর্তি মোটা মোটা বই। কত যে ম্যাগাজিন! পেপারওয়ালা দিয়ে যায়। চেষ্টার কসুর নেই। তরু চাকরি পাবেই, তাপস সিকদারের বিশ্বাস। শুধু ভয়টা কাটানোর অপেক্ষা। পরীক্ষার খাতায় যেদিন ঢেলে দিয়ে আসতে পারবে সেদিনই হবে। অপেক্ষা বড় গোলমেলে শব্দ। শেষ না হওয়া অপেক্ষারা কত মহাকাব্য লিখেছে। কতবার! অপেক্ষাবসানের দিনটার দিকে চোখ পেতে থাকেন, নির্নিমেষ। মাঝে মাঝে ছেলের ঘরে এসে পেপ টক দেন। ইউ টিউব দেখে আয়ত্ত করেছেন। তরু মন দিয়ে শোনে। বাধ্য ছেলে। এত কিছু মিলে মিশে গিন্নির সঙ্গে সম্পর্কটা বেশ ঘেঁটে গেছে। কেমন যেন তিক্ত-কষায়। বেশ বুঝতে পারেন। নিজেকে বকে দেন। কিন্তু ব্যাড হ্যাবিট হল স্টিকি মিউকাসের মতো। আঠালো কফ। চট করে রেহাই দেয় না। হোমিওপ্যাথিতে নাকি স্টিকি মিউকাসের ওষুধ আছে। ক্যালি-বাই-ক্রোম। ডাক্তার বসু বলেছিলেন। আজও মনে আছে। তখন কৃষ্ণনগরে পোস্টিং। সর্দি সারছিল না। আঠালো বদভ্যাসের ওষুধ খোঁজেন তাপস সিকদার। খুঁজে চলেন। পান না।
গরমটা বেশ গুছিয়ে পড়েছে। এবার নাকি এল নিনোর প্রভাবে দাপটটা বেশি। আর বৃক্ষ-নিধন যজ্ঞ। আত্মাহুতি দিয়ে চলেছে নির্বোধ মানুষ। গ্লোবাল ওয়ার্মিং ট্রিগার করেছে নতুন করে। আজ রেজাল্ট বার হবার দিন ছিল। পিএসসি ক্লার্কশিপ। কী একটা কোন্দল বেধেছে পাশের পাড়ায়। ইন্টারনেট বন্ধ। জ্যামার লাগিয়েছে। সরকারি নির্দেশ। বাড়িতে বসে ডাউনলোডের সুযোগ নেই। সেই ঢিকির ঢিকির বাসে করে পিএসসি অফিস। হত্যে দিয়ে বসে থাকা। শহরের অগ্নিস্নাত দুপুর। ঘামে জবজব জামা। শরীরের সঙ্গে লেপ্টে থাকা গেঞ্জি। এসব কষ্ট টের পান না তাপস সিকদার। সে বিলাসিতার সুযোগ নেই তাঁর। রাতে অঙ্ক কষা শেষ হলে অবসন্ন শরীরটাকে বিছানায় টেনে নিয়ে যান। অঘোরে ঘুমোচ্ছে মালতী। সে ভালই হয়েছে। নাহলে আবার জিজ্ঞাসু চোখ। প্রশ্নবান। অন্তহীন। তার চেয়ে বরং ঝগড়া ভাল। কিন্তু এ মেয়ে ঝগড়ায় দড় নয়, এমনই দুর্ভাগ্য। রেয়ার স্পিসিস। মালতীও বুড়ো হল। তবু মেয়ে বলতে ভাল লাগে। বউ বুড়ো হলে ছেলেদের মন খারাপ হয়। তাঁরও হল। আলো নিভিয়ে নাইট ল্যাম্প জ্বেলে দিলেন। নরম সবুজ আলো। মায়াবী লাগে মালতীর মুখ। বেশ চেনা চেনা মনে হয়। কত জন্মের বা আলাপ! এ মুখ হয়তো পূর্বতন তৃতীয় বা পঞ্চম জন্মের। না না এটাই প্রথম জন্ম। সাত জন্ম মালতীকে পাশে চান তাপস সিকদার। তিনি ব্যতিক্রমী। মালতীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে হয় তাঁর। ইচ্ছে দমন করেন। কাঁচা ঘুম ভেঙে যেতে পারে। উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে পড়েন। কাল কোনও রেজাল্ট বার হবার নেই। চুলে বিলি কেটে দেয় একটা হাত। বড় আরাম। চোখ জুড়ে আসতে চায়।
—তুমি ঘুমোওনি?
—না গো। ব্যাপারটা একটু খুলে বলবে আমায়?
—কোন ব্যাপার?
–তুমি জানো। আর রাখঢাক কোরো না। এবার কিন্তু দুশ্চিন্তা হচ্ছে আমার।
—না… মানে… আমাদের তরু তো তেমন স্মার্ট নেয়। বরং এখনও বেশ মুখচোরাই। কোন কোন পরীক্ষা দিয়েছে জিজ্ঞেস করাই কঠিন। হয়তো এক্সামোফবিয়া আবার চাগাড় দিল! তাই ও যাবার আগেই আমি গিয়ে দেখে আসি ওর নামটা আছে কী না। আমি জানি তরু কোনও একদিন চাকরি পাবেই। এত খাটছে। মেধাও তো নেহাত মন্দ ছিল না। ভাবি সারপ্রাইজ দেব ছেলেটাকে। তা আর হয় না।
—শুধু কী এটুকুই?
—তোমাকে যে মিথ্যে বলতে পারি না মালতী। বলিনি কখনও। আমি না অ্যাস্ট্রলজি, মানত-টানত এসবও ভেবেছিলাম। কিন্তু একেবারেই বিশ্বাস নেই যে। বেশি দূর এগোতে পারলাম না তাই। পিছিয়ে এলাম। গুটিগুটি পায়ে।
—আর ওই খাতায় কী সব লিখে রাখা। রাত জেগে অংক কষা।
—আসলে তরু তো আমার বুড়ো বয়সের ছেলে। লেট ইস্যু। ওর ডানা মেলার আগেই এ বুড়ো থুত্থুরো। তাই তো চাকরিটা পাওয়া অব্দি টিকে থাকার একটা ছেলেমানুষী চেষ্টা। সকাল সন্ধ্যা হাঁটাহাঁটি। তোমাকে কম ফরমাস করে নিজের কাজ নিজে করে নেওয়া। তাতে আমার কষ্ট হয়। খুউব। জানো? এত দিনের অভ্যাস। পায়ের উপর পা তোলা জীবন। তোমার প্রশ্রয়, আশকারা, আদর। আসলে শরীর ব্যাটা যাতে একটু সচল থাকে, তাই। থেমে যাবার দিনটা যাতে ঠেলে একটু পিছিয়ে দেওয়া যায়। সে যায় না, জানি। তবু…
—তাহলে শুধু ওই বাবার নামের কলামটা কেন?
—ওরে বাবা! তুমি তো ঝানু গোয়েন্দা হে! এটাও চোখ এড়ায়নি! আসলে কতজনের বাবার নামের আগে লেট আছে সেটা গুনি। সন্তানের চাকরি পাবার আগেই কত শতাংশ বাবার ডাক এসে গেল, হিসেব করি। তাছাড়া নানা প্যারামিটার লাগিয়ে প্রোব্যাবিলিটির অঙ্ক কষি। কত পারমুটেশান, কম্বিনেশান! কত ভাগ অভাগা বাবাকে আগে ভাগেই পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলতে হল… সেইসব হিসেব। আমার কিন্তু স্ট্যাটিস্টিক্স পাস পেপার ছিল। তোমার মনে আছে তো? খুব বোকা বোকা লাগছে, তাই না? জানি গো। সেটাই তো স্বাভাবিক। তবু একেবারে নেশার মতো। পেয়ে বসেছে জানো! আরও একটা কাজ করি। যাঁদের নামের আগে লেট বসে গেছে একটু ফাঁকা জায়গায় গিয়ে তাঁদের নাম ধরে ডাকি। আকাশমুখো হয়ে। খবরটা দিই। বলি, অমুকবাবু শুনুন, আপনার ছেলে আজ চাকরি পেয়েছে গো। এবার আপনি ঘুমোন। আর চিন্তা নেই। হয়তো সেই ছেলে বা মেয়ের এই আনন্দদিনে বাবার কথা মনেই নেই। হয়তো বা আছে। কিন্তু আমি তো আর চান্স নিতে পারি না। বলো? আসলে আমার বড় দুশ্চিন্তা হয়। নিজের বয়সের গাছ পাথর নেই তো! তোমারও হয় জানি। তবু মেয়েদের তো সংসারে ঊনকোটি কাজ। জড়িয়ে মড়িয়ে থাকা। তাই হয়তো দুশ্চিন্তা বাবাজী পুরো মনটার দখল নিতে পারে না। আমাদের তরু ঠিক চাকরি পাবে। তুমি দেখে নিও।
মালতী ফ্যালফ্যাল চেয়ে থাকেন। তাঁর মুখে কথা জোগায় না। মায়া হয় মানুষটার উপর। আরও একটু ভালবেসে ফেলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন, ‘ঘুমিয়ে পড়ো। অনেক রাত হল। সকালে হাঁটতে হবে যে। সুস্থ থাকতে হবে তো।’
Advertisement



