• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

উপনির্বাচনে বামেরা কি বিজেপি-কে ‘টেক্কা’ দিতে পারবে?

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, ছয়টি সংসদীয় কেন্দ্রে বামেরা ৫ শতাংশ ভোট তাদের ঝুলিতে ভরতে পেরেছে। বর্তমানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কোচবিহারের সিতাই কেন্দ্রে বামেদের শোচনীয় ফল হয়েছিল।

প্রতীকী চিত্র

আগামী ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। এই ছয়টি কেন্দ্র রয়েছে রাজ্যের পাঁচটি জেলায়। লোকসভা নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেস জোট গড়লেও এবারের উপনির্বাচনে প্রত্যেকেই নিজেদের শক্তি পরীক্ষা করতে চাইছে। সেজন্য ২০২৬ -এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাম ও কংগ্রেসের কাছে এই উপনির্বাচন যেন একটা অ্যাসিড টেস্ট। তারা তাদের পক্ষে কত মানুষের সমর্থন আদায় করতে পারে, এখন সেটাই দেখার। সেই সঙ্গে গেরুয়া শিবির বিজেপি-রও প্রকৃত জনসমর্থন কত শতাংশ আছে, তার একটি পূর্বাভাসও পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই নির্বাচনে বামেরা এককভাবে লড়ে বিজেপি-কে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে পারে কিনা তা দেখার জন্য উৎসুক রাজ্যের রাজনৈতিক সচেতন মানুষ!

সেজন্য রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির জেরে মানুষের মনে কী রাজনৈতিক প্রভাব পড়েছে, তা বোঝার জন্য এই উপনির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই ভোটের মাধ্যমে রাজ্যের পাঁচ জেলা আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের চিন্তা ভাবনার প্রতিফলন পাওয়া যাবে। যা থেকে রাজ্যের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী আছে, সেবিষয়ে আভাস পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত গত ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে একমাত্র আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট বিজেপি-র দখলে ছিল। কিন্তু বাকি পাঁচটি কেন্দ্র সিতাই, তালডাংরা, মেদিনীপুর, নৈহাটি, হাড়োয়া কেন্দ্রে শাসকদল তৃণমূলই জয়লাভ করেছিল। আবার ছয়টি কেন্দ্রের প্রতিটি বিধায়ক লোকসভা ভোটে জয়লাভের কারণে তাঁদের বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।

Advertisement

যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, অতীতে অধিকাংশ উপনির্বাচনের ফলাফলে দেখা গিয়েছে, শাসকদলই জয়লাভ করেছে। কারণ যেহেতু তারা ক্ষমতা রয়েছে, সেজন্য ভোট বিরোধীদের দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের অনীহা বেশি কাজ করে। আবার ২০২১-এর পর রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন থেকেই তারা রাজ্যের বিরোধীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে আসছে। তা সত্ত্বেও এবার কোমর বেঁধেছে বামফ্রন্ট। জনমানসে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে তারা মাঠে নেমে পড়েছে। কারণ, বর্তমানে বিধানসভা এবং লোকসভাতে রাজ্য থেকে তাদের কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। তারা রাজ্য বিধানসভায় নতুন করে খাতা খুলতে মরিয়া হয়ে আছে।

Advertisement

এদিকে আরজি করের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত প্রায় দুই মাস ধরে কলকাতা শহর তথা রাজ্যজুড়ে দফায় দফায় বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে কর্মবিরতি ঘোষণা করে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছে। এসপ্ল্যানেডে ১৭ দিন ধরে আমরণ অনশনেও সামিল হন তাঁরা। তাঁদের প্রতিটি আন্দোলনে বামফ্রন্ট পাশে থেকেছে ও নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। এভাবে সিপিএম মানুষের মনে নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে সেটা ভোট ব্যাঙ্কে কতটা প্রভাব ফেলে সেটাই দেখার জন্য মুখিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল। এরকম পরিস্থিতিতে একবার দেখে নেওয়া যাক বিগত ভোটে এইসব কেন্দ্রে বামেদের অবস্থান ঠিক কোথায় ছিল।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, ছয়টি সংসদীয় কেন্দ্রে বামেরা ৫ শতাংশ ভোট তাদের ঝুলিতে ভরতে পেরেছে। বর্তমানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কোচবিহারের সিতাই কেন্দ্রে বামেদের শোচনীয় ফল হয়েছিল। এখানে ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী নীতীশ চন্দ্র রায় মাত্র ২ হাজার ১৬২টি ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামানিক এই কেন্দ্রে ৯৯ হাজার ৫০০টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। আবার এই কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লক্ষ ২৮ হাজার।

একইভাবে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের মাদারিহাট বিধানসভায় আরএসপি প্রার্থী মাত্র ৪ হাজার ৪০ ভোট পেয়েছিলেন। বসিরহাটের হাড়োয়া কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী নিরাপদ সরদার ৭ হাজার ৪০০ ভোট পেয়েছিলেন। অথচ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেখা পাত্র এই কেন্দ্রে তাঁর থেকে অনেক ভালো ফল করেছিলেন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৪ হাজার ২৩৫টি। আর হাজি নুরুল এই কেন্দ্রে ব্যাপক ভোট পেয়েছিলেন। হাড়োয়া কেন্দ্রে তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লক্ষ ৪৫ হাজার।

তবে অন্য পাঁচ কেন্দ্রের তুলনায় নৈহাটি কেন্দ্রে ভালো ফল করেছিলেন ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থী দেবদূত ঘোষ। তিনি এই কেন্দ্রে ১৪ হাজার ৯২৫ ভোট পেয়েছিলেন। যা প্রায় ৯.৫ শতাংশ। আর তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অর্জুন সিং ৬০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। একইভাবে মেদিনীপুর কেন্দ্রে সিপিআই প্রার্থী পেয়েছিলেন মাত্র ৫ শতাংশ ভোট। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই কেন্দ্রে কমপক্ষে ১০টি নির্বাচনে বিজেপি বামেদের থেকে অনেক বেশি ভোট পেয়ে আসছে।

Advertisement