মেকআপের নিচে দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ

Written by SNS April 15, 2024 4:57 pm

বলা হয় মুখ মানুষের মনের অভিব্যক্তি৷ মুখ বা ত্বক দেখে নাকি মনের ভাব পড়া যায়৷ বা বলা ভালো ত্বকে মনের প্রতিফলন পড়ে৷ কথাটা হয়তো আপনি আগেও শুনেছেন৷
কিছুদিন আগেই বলিউড তারকা ক্যাটরিনা কাইফ তাঁর বিউটি ব্র্যান্ড ‘কে বাই ক্যাটরিনা’র একটি অনুষ্ঠানে এসে বলেছিলেন, বিয়ের পর তাঁকে মেকআপ নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হয়নি৷ কেননা, তিনি এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সুখী৷ আর সেটা তাঁর ত্বকে ধরা পড়ে৷ তাই সুন্দর দেখাতে মেকআপের কারসাজির ওপর নির্ভরতা কমেছে৷
ত্বকের ওপর ‘স্ট্রেস’–এর প্রভাব কী, তা ক্যাটরিনার বক্তব্যে স্পষ্ট৷ত্বক দেখে মন পড়া যায়৷ কেননা, ত্বকে মনের প্রতিফলন পড়ে৷
আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপে কর্টিসল বৃদ্ধি পায় (বয়স বাড়ার সঙ্গেও শরীরে কর্টিসলের উৎপাদন বাড়ে), আর এ কারণেই ত্বক বুড়িয়ে যায়৷ কেননা, অতিরিক্ত কর্টিসল কোলাজেনকে ভেঙে ফেলে ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিড কমায়৷ কোলাজেন ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিড কমে যায় বলে ত্বক ভেঙে গিয়ে ত্বকে বয়সের বলিরেখা বা ছাপ পড়ে৷ এ ছাড়া দুশ্চিন্তা করলে ফ্রি র্যাডিকেল নিঃসৃত হয়৷ এটি ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন ফাইবারের গঠন ভেঙে ফেলে৷ এর ফলেও দ্রুত ত্বকে বলিরেখা পড়ে৷ত্বকে দুশ্চিন্তার প্রভাব মেকআপ দিয়ে খানিকটা ঢাকা গেলেও ওভারঅল লুক থেকে সেটা সরানো যায় না৷ ত্বকে দুশ্চিন্তার প্রভাব মেকআপ দিয়ে খানিকটা ঢাকা গেলেও ওভারঅল লুক থেকে সেটা সরানো যায় না৷ কেননা, আর কোথাও না হোক, চোখে সেটার একটা প্রতিফলন থাকবেই৷ অনেকে বিয়ের মেকআপে নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য মানসিক চাপ অনুভব করেন৷ আর ঠিক এ কারণেই তাঁর স্বাভাবিক সৌন্দর্য অনেক সময় পুরোপুরি প্রকাশিত হয় না৷মানসিক দুশ্চিন্তা, হতাশা, মানসিক চাপ ও নেতিবাচক জীবনযাপনের ফলে স্বাভাবিক কোমলতা হারায় ত্বক, তৈরি হয় কুঁচকে যাওয়া, ব্রণ, চর্মরোগ, শুষ্কতা ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা৷
ভারতের ‘মাস ওয়েলনেস ক্লিনিক’-এর কসমেটিক সার্জন এবং ‘ওয়েলনেস’ বিশেষজ্ঞ ডা. গীতা গ্রিওয়াল জানান, মানসিক চাপ শরীর ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে৷ তা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ত্বকে তেলের উৎপাদন বাড়ায়৷ ত্বক মলিন ও নিষ্প্রাণ হয়ে যায়৷ তেলভাবের ফলে হোয়াইটহেডস ও ব্ল্যাকহেডস বেড়ে যায়৷ হতাশার কারণে ত্বকের ডিএনএ সিস্টেমই ক্ষতিগ্রস্ত হয়! এতে ত্বক নমনীয়তা হারায়, বলিরেখা পড়ে৷ ফলে স্বাভাবিকতা হারায় ত্বক, দেখা দিতে পারে ব্রণ৷ কর্টিসল হরমোনের প্রভাবে শরীরের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়৷ ফলে ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল আচরণ করতে পারে৷ সহজেই আক্রান্ত হয়৷ চুলকানি, র্যাশসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে৷
কর্টিসল হরমোনের প্রভাবে শরীরের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়৷ ফলে ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল আচরণ করতে পারেছবি: প্রথম আলোমানুষ সাধারণত মানসিক চাপে থাকলে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রবণতা বাড়ে৷ যেমন সময়মতো ঘুম হয় না৷ নেতিবাচক চিন্তায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে মন৷ পর্যাপ্ত জল খাওয়া হয় না৷ নিজের যত্ন নেওয়া হয় না৷ ত্বকের দিকেও আলাদা করে নজর দেওয়া হয় না৷ ফলে ত্বক আরও বেশি করে নাজুক হয়ে পড়ে৷ বিশেষ করে চোখের চারপাশের সংবেদনশীল নরম অংশ আরও বেশি করে আক্রান্ত হয়৷ তৈরি হয় ডার্ক সার্কেল৷
মানসিক চাপ চুলের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে৷ অতিরিক্ত চুল পড়ে, চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ও বৃদ্ধি নষ্ট হয়৷ রূপ বিশেষজ্ঞরা বলেন স্বাস্থ্যকর সুন্দর ত্বকের অন্যতম রহস্য হলো, ত্বকের আলাদা যত্নের পাশাপাশি সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করা৷ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করুন৷ প্রতিদিন ভোরের রোদ গায়ে মাখুন৷ প্রকৃতি, পোষা প্রাণী আর গাছের সঙ্গে সময় কাটান৷