আমাদের সুন্দরবন

Written by SNS April 20, 2024 2:05 pm

হাননান আহসান

সুন্দরবন নামের মধ্যে কেমন গা ছমছমে অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করে৷ প্রথমেই মনে হবে এক ও অদ্বিতীয় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা৷ সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া গাছের কথা৷ আসলে সুন্দরবন প্রকৃতির বিস্ময়কর বনভূমির অন্যতম৷ আমাদের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান৷ পদ্মা-মেঘনা-ব্রম্মপুত্র নদীর অববাহিকার ব-দ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই মনোমুগ্ধকর বনভূমির বেশিরভাগ অংশ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে৷ তাদের খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট জেলার প্রশস্ত অংশে সুন্দরবন তার অপরূপ সৌন্দর্য্য নিয়ে অবস্থান করছে৷ সমুদ্র উপকূলের লোনা পরিবেশের ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনের খ্যাতি জগৎ জোড়া৷ এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো অখণ্ড ম্যানগ্রোভ বনভূমি৷ গোটা সুন্দরবনের ৬৫১৭ বর্গ কিলোমিটার অর্থাৎ ৬৬ শতাংশ বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত৷ ভারতের অংশে রয়েছে ৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ৪২৬৪ কিলোমিটার৷ সমুদ্রের স্রোতের ধারা, কাদা চর আর লবণযুক্ত ম্যানগ্রোভ বনভূমি নিয়ে সুন্দরবন আলাদা এক দ্বীপমামা৷ গোটা জঙ্গলের ৩১.১ শতাংশ অর্থাৎ ১৮৭৪ বর্গ কিলোমিটারে রয়েছে জলাকীর্ণ অঞ্চল যেমন নদীনালা, খাঁড়ি, বিল ইত্যাদি৷ এসবের ভেতর সুন্দরবন তার নিজস্ব পরিচয়ে অন্য বনভূমিগুলিকে পেছনে ফেলে দিয়েছে৷ তা হল বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার৷ বিশ্বজুড়ে যার খ্যাতি রয়েছে৷ বাঘ ছাড়াও এই বনভূমিতে রয়েছে চিত্রা হরিণ, নানা প্রজাতির পাখি, কেটো কচ্ছপ, লোনা জলের কুমির, স্বাদু জলের কুমির, সাপসহ বিচিত্রতর প্রাণী৷ সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা গেছে এই বনভূমিতে তুলনামূলকভাবে বাঘের সংখ্যা অনেক কম৷ মাত্র ১০৬টি বাঘ আর অসংখ্য হরিণ নিয়ে এই বনভূমি দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ সুন্দরবনে নানা ধরনের প্রাণীর বাস৷

রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আবাস এখানেই৷ এই বনভূমিতে আছে প্রায় ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩২০ প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি, প্রায় ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর এবং প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ৷ রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়া সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, রেসাস বানর, বন বিড়াল, লিওপার্ড, সজারু, উদ, এবং বন্য শূকর৷ হরিণ ও বন্য শূকর বাঘের প্রধান শিকার৷ এই বনে মাছরাঙা আছে ৯ প্রজাতির৷ পাখি সম্পদে উৎকর্ষ সুন্দরবনে কাঠঠোকরা, ভগীরথ, পেঁচা, মধুপায়ী, বুলবুল, শালিক, ফিঙে, বাবুই, ঘুঘু, বেনে বৌ, হাঁডি়চাঁচা, ফুলঝুরি, মুনিয়া, টুনটুনি ও দোয়েল সহ রয়েছে নানা ধরনের ছোট ছোট গায়ক পাখি৷ প্রায় ৫০ প্রজাতির সরীসৃপের মধ্যে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড়ো সদস্য মোহনার কুমির৷ এদের কোন কোনটির দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ৭ মিটার৷ ম্যানগ্রোভ পরিবেশে এক সময় এদের প্রচুর দেখা গেলেও এখন সেখানে মাত্র ২৫০টির মতো হবে৷ গুইসাপসহ টিকটিকি জাতীয় সরীসৃপ, কচ্ছপ এবং সাপের দেখা মেলে৷ সাপের মধ্যে উলে­খযোগ্য রাজগোখরা, রাসেলস ভাইপার, অজগর, ব্যান্ডেড ক্রেইট এবং নানা প্রজাতির সামুদ্রিক সাপ৷ এছাড়া নানাবিধ পাখির এক অপরূপ আবাসস্থান সুন্দরবনে৷ এখানকার বেশিরভাগ পাখিই স্থানীয়, প্রায় ৫০ প্রজাতির পরিযায়ী এখানে থাকে৷ এদের অধিকাংশই হাঁসজাতীয়৷ বক, সারস, হাড়গিলা, কাদা-খোঁচা, লেনজা ও হট্টিটি সহ অসংখ্য উপকূলীয় পাখি এখানকার নদীনালার কিনারায় ঘুরে বেড়ায়৷ সমুদ্র আর বড়ো বড়ো নদীর উপকূলভাগে দেখা যায় বহু প্রজাতির গাংচিল, জলকবুতর, টার্ন ইত্যাদি৷ চিল, ঈগল, শকুন ইত্যাদির প্রায় ২২ প্রজাতির পাখি এখানে রয়েছে৷ এই বনে মাছরাঙা আছে ৯ প্রজাতির৷ পাখি সম্পদে উৎকর্ষ সুন্দরবনে কাঠঠোকরা, ভগীরথ, পেঁচা, মধুপায়ী, বুলবুল, শালিক, ফিঙে, বাবুই, ঘুঘু, বেনে বৌ, হাঁডি়চাঁচা, ফুলঝুরি, মুনিয়া, টুনটুনি ও দোয়েলসহ রয়েছে নানা ধরনের ছোটো ছোটো গায়ক পাখি৷