নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়েই ট্রাম্পকে একহাত নিলেন জোহরান মামদানি

নিউ ইয়র্কের মেয়র হলেন ডেমোক্র্যাট নেতা জোহরান মামদানি। নির্বাচনে জিতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একহাত নিলেন তিনি। ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী মামদানির বিরুদ্ধে একাধিক হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়েই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মামদানি। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প, আমি জানি আপনি আমার কথা শুনছেন। আমার আপনাকে চারটি শব্দ বলার আছে, আরও জোরে চিৎকার করুন।‘

নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়লেন চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ারের পুত্র জোহরান মামদানি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘কমিউনিস্ট’ জোহরান নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হলে শহরের কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ করে দেবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারিকে তোয়াক্কা না করে মামদানিকে জয়ী করল নিউ ইয়র্কবাসী।

মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ছিলেন ট্রাম্প সমর্থিত রিপাবলিকান প্রার্থী কুর্টিস স্লিওয়া এবং আরও এক ডেমোক্র্যাট প্রার্থী তথা নিউ ইয়র্কের প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো। সূত্রের খবর, নির্বাচনে ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছেন মামদানি। অ্যান্ড্রু পেয়েছেন প্রায় ৪১ শতাংশের কাছাকাছি ভোট। সূত্রের খবর,  রিপাবলিকান প্রার্থী কুর্টিসের প্রাপ্ত ভোট ১০ শতাশেরও নীচে।


দলীয় প্রার্থীর এই পরাজয় নিয়ে মুখ খুলেছেন ট্রাম্প। সমাজমাধ্যমের এক পোস্টে ট্রাম্প জানিয়েছেন, সমীক্ষক সংস্থা ‘পোলস্টার’ অনুসারে দু’টি কারণেই রিপাবলিকান শিবির নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। প্রথমত, ট্রাম্প এই ভোটে প্রার্থী ছিলেন না। দ্বিতীয়ত, আমেরিকার ‘শাটডাউন’।  শুধু নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে নয়, ভার্জিনিয়া এবং নিউ জার্সি প্রদেশের প্রেসি়ডেন্ট নির্বাচনেও পরাস্ত হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থীরা।আগামী ১ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কের মেয়র হিসাবে শপথ নেবেন জোহরান মামদানি। তিনিই হবেন নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র। নিউ ইয়র্কের গত ১০০ বছরের ইতিহাসে ৩৪ বছর বয়সি মামদানিই হবেন কনিষ্ঠতম মেয়র।

জয়ের পরে প্রথম বক্তৃতায় ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জওহরলাল নেহরুর উক্তি উদ্ধৃত করেন জোহরান বলেন,‘আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আমার জওহরলাল নেহরুর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এমন কিছু মুহূর্ত আছে যা ইতিহাসে কম সময়ের জন্য আসে। যখন আমরা পুরাতন থেকে নতুনের দিকে পা বাড়াই, যখন একটি যুগ শেষ হয় এবং যখন দীর্ঘ নিপীড়িত জাতির আত্মা স্বর খুঁজে পায়।‘  ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার সময়ে এই কথাগুলি বলেছিলেন জহওর লাল নেহরু। এর পরেই মামদানি বলেন, ‘আজ রাতে আমরা পুরনোকে ছেড়ে নতুনের দিকে পা রাখছি।‘

জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়। তাঁর বাবা বিখ্যাত লেখক মাহমুদ মামদানি। তিনি মুম্বইতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।  জোহরানের মা হলেন স্বনামধন্য চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার। জন্মের কিছু বছর পর মামদানি নিউ ইয়র্কে চলে যান। বর্তমানে তিনি নিউ ইয়র্কের কুইন্সের বাসিন্দা। মামদানির জয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলিউডের স্বনামধন্য চিত্র পরিচালক জোয়া আখতার। তাঁর পোস্টে লেখা, ‘শুভেচ্ছা, জোহরান মামদানি নিউ ইয়র্কের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়সে।’ জোয়ার সেই পোস্ট নিজের সামাজ মাধ্যমে শেয়ার করে ছেলের জয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান চিত্র পরিচালক মা মীরা নায়ার। জোয়ার সেই পোস্টে তিনি সংযোজন করে লেখেন, ‘জোহরান ইউ বিউটি’ ।

নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচন সম্পন্ন হতেই সকল ডেমোক্র্যাট নেতাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘ভোটে জয়ী সকল ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের অভিনন্দন জানাই। যখন শক্তিশালী, দূরদর্শী নেতারা একত্রিত হন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন, তখন তাঁরা জয়ী হন। ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল। তবে আমাদের এখনও অনেক কাজ বাকি আছে।’

জোহরান মামদানি শুধু ট্রাম্প বিরোধী নয়,  কট্টর মোদী বিরোধী বলেও পরিচিত।  মেয়র নির্বাচনের আগে থেকেই প্রগতিশীল কথাবার্তার জন্য আলোচনার শীর্ষে ছিলেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কোনওদিনই একমঞ্চে বসতে পারব না। কারণ হিসেবে মোদীকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে ব্যাখ্যা করেন মামদানি। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে একই ছাঁচে গড়া বলেও নিশানা করেন জোহরান।  দু’জনকেই  যুদ্ধাপরাধী বলে নিশানা করেন মামদানি।