ময়মনসিংহে খুন হওয়া দীপু দাসের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানাল বাংলাদেশের তদারকি সরকার। ২৫ বছরের দীপুকে পিটিয়ে খুন করে তাঁর দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মঙ্গলবার বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে গিয়ে কাপড়কলের শ্রমিক দীপুর খুনের ঘটনাকে ‘পাশবিক অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। এই অপরাধের কোনও অজুহাত হতে পারে না বলেও জানান শিক্ষা উপদেষ্টা।
ময়মনসিংহের ভালুকায় সংখ্যালঘু দীপুর খুনে ঘটনায় ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়ে ইউনূস সরকার। আন্তর্জাতিক স্তরেও সমালোচিত হতে হয় এই সরকারকে। ওপার বাংলায় সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। দীপুর খুনে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাষ্ট্রসঙ্ঘও। সংখ্যালঘু হামলায় সমালোচিত হয়ে তড়িঘড়ি দীপুর বাড়িতে ‘দূত’ পাঠান ইউনূস। মঙ্গলবার দীপুর গ্রামের বাড়িতে যান শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার।
সেখানে তিনি বলেন, ‘দীপুচন্দ্র দাসের বাবা-মা, স্ত্রী এবং সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে রাষ্ট্র। এ বিষয়ে এখানে আসার আগে আমার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি আমাকে দাস পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন। পরিবারের সমস্ত চাহিদার বিষয়ে জানা হবে এবং তা পূরণ করা হবে। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’
দীপুর বাবা রবিচন্দ্র দাস পুত্রের হত্যার বিচার চেয়েছেন। রোজগেরে পুত্রকে হারিয়ে তাঁদের এখন কী অবস্থা, সে কথাও উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেছেন। উপদেষ্টা আবরার বলেন, ‘তদন্ত চলছে। যারা দায়ী, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বিচারের অধীনে আনা হবে। এ ধরনের হিংসার বিরুদ্ধে আইন তার পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করবে।’
এক্স হ্যান্ডলে মুহাম্মদ ইউনূসের দপ্তর থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, দীপুচন্দ্র দাসের খুনের মতো হিংসার ঘটনায় কোনও স্থান বাংলাদেশে নেই। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সঙ্গে ইউনূসের দপ্তরের সংযোজন, বাংলাদেশ সরকার ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে সমস্ত নাগরিককে সুরক্ষা, মর্যাদা এবং সমানাধিকার দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আবরার জানিয়েছেন, কিছু দুষ্কৃতী বিভাজন উস্কে দিচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘ধর্ম বা পরিচয় নির্বিশেষে সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় রাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সমাজ একসঙ্গে কাজ করবে। নিশ্চিত করবে, যাতে হিংসা বরদাস্ত করা না হয়। বর্তমানে কিছু দুষ্কৃতকারী গোষ্ঠী বিভাজন সৃষ্টি করে অস্থিরতা উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের গণআন্দোলনের অন্যতম মুখ তথা ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গত ১২ ডিসেম্বর গুলি করা হয়। ১৮ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। তার পরেই অশান্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দীপুচন্দ্র দাসকে পিটিয়ে খুন করা হয়। এর পরে তাঁর দেহ বিবস্ত্র করে গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ বার সেই দীপুর পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানাল বাংলাদেশ সরকার।