দেশত্যাগী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই একতরফা সাজা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। মানবতাবিরোধী অপরাধ, একাধিক হত্যার দায়ে মুজিব-কন্যাকে দেওয়া হয়েছে ফাঁসির সাজা। হাসিনার পাশাপাশি সাজা ঘোষণা হয়েছে বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানেরও। কিন্তু যাঁরা দেশেই নেই তাঁদের সাজা হয় কীভাবে? সাজা ঘোষণার পর থেকেই হাসিনাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৎপর হতে দেখা গিয়েছে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে। দুই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরাতে এবার ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। ইউনুস প্রশাসনের তফে হাসিনাদের ফেরাতে ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এমনকী ইন্টারপোলের কাছে ‘রেড কর্নার নোটিস’ জারির আবেদন করতে চলেছে ইউনূস সরকার।
এই প্রসঙ্গে ইউনূস সরকারের আইনজীবী গাজি এমএইচ তামিম জানান, দেশের দুই পলাতক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে আবেদন জমা দেওয়া হয়েছিল। তবে সাজা ঘোষণার পর ইন্টারপোলের কাছে দোষী সাব্যস্ত পরোয়ানার ভিত্তিতে নতুন করে ‘রেড কর্নার নোটিস’ জারির আহ্বান করা হবে।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেরে গত বছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন হাসিনা। শুধু তিনি একা নন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসেন আসাদুজ্জামানও। তারপর হাসিনা এবং আসাদুজ্জামানকে ফেরত পেতে ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয় অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে ভারতের কাছে অনুরোধ করা হয় হাসিনাকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে। এমনকী দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তির কথাও দিল্লিকে মনে করিয়ে দিয়েছে ঢাকা। বিবৃতিতে স্পষ্ট করে জানানো হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের (হাসিনা ও আসাদুজ্জামান) দ্বিতীয় কোনও দেশ যদি আশ্রয় দেয়, তবে তা ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ’ হবে, যা ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। ভারতের কাছে তাদের আবেদন, অবিলম্বে যেন হাসিনাদের বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
যদিও বাংলাদেশের সেই বিবৃতির জবাবে ভারতের তরফে জানানো হয়, ‘ভারত হাসিনাদের সাজা ঘোষণা সম্পর্কে অবগত। ভারত সবসময় বাংলাদেশের মানুষের শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার পক্ষেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তবে হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর এই মুহূর্তে কোনও যথাযথ কারণ ভারত দেখছে না। ভারতের এই উত্তরের পরই হাসিনাদের প্রত্যর্পণ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে চিঠিও দেবে বলে জানিয়েছে ইউনূস প্রশাসন।
অন্যদিকে, জানা গিয়েছে গত বছরের মত এ বছরও বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজের আয়োজন করবে না ইউনূস সরকার। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনা এবং বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি ফৌজ। তারপর থেকে এই দিনটিকে স্মরণ করে প্রতিবছর বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজ আয়োজিত করে এসেছে বাংলাদেশ।