ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক তথা জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ওসমান হাদির মৃত্যু ঘিরে গত দু’দিন ধরে তাণ্ডব দেখেছে বাংলাদেশ তথা গোটা বিশ্ব। এবার গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খুললেন তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের দু’টি প্রথম সারির সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ এবং ‘ডেলি স্টারের’ দপ্তরে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ওই দিন রাতেই দুই সংবাদপত্রের সম্পাদকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ইউনূস। পাশে থাকার বার্তা দেন তিনি। শুক্রবার সকালে এ কথা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে ইউনূসের প্রেস উইং।
ইউনূসের দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রথম আলো’-র সম্পাদক মতিউর রহমান এবং ‘ডেলি স্টার’-এর সম্পাদক মাহফুজ আনামের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদকর্মীদের উপর হামলাকে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন তিনি। ইউনূসের কথায়, ‘এই হামলা আমাকে গভীর ভাবে ব্যথিত করেছে। এই দুঃসময়ে সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে।’
এই ঘটনাকে ‘স্বাধীন গণমাধ্যমের উপর হামলার শামিল’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাপ্রাপ্ত হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন তিনি।দু’টি সংবাদপত্রকেই পূর্ণ নিরাপত্তা এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সম্পাদকদের সঙ্গেও ইউনূস দেখা করবেন বলে জানানো হয়েছে।
ইউনূসের দপ্তরের তরফে বলা হয়েছে, ‘যাঁরা বিশৃঙ্খলাকে পুঁজি করে এবং শান্তির পথকে উপেক্ষা করে, তাঁদের জন্য অগ্রগতিকে ব্যাহত হতে দেওয়া যাবে না।’ বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঘটা যাবতীয় ঘটনাকে ‘উগ্র গোষ্ঠী দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা’ বলেছে ইউনূসের দপ্তর। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগেই উন্মত্ত জনতার বিক্ষোভে উত্তাল পদ্মাপারের দেশ।
এই পরিস্থিতিতে নির্বিঘ্নে ভোট হওয়া নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সূত্রের খবর, নির্বাচনী আধিকারিক এবং প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও। সূত্রের খবর অনুসারে, নির্বাচনের কাজের সঙ্গে যুক্ত রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের দপ্তরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনের অন্য আধিকারিকদেরও নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। শাহবাগে জমায়েত করেছিলেন বহু মানুষ। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাদি গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরনো পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে লড়াই করার কথা ছিল হাদির।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটও রয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর থেকেই মনোনয়ন জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। চলবে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি চলবে মনোনয়ন পরীক্ষার কাজ। কোনও মনোনয়ন বাতিল হলে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি হবে সেই আপিলগুলি যাচাইয়ের কাজ। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ এবং নির্বাচনী প্রতীক নির্ধারণ করা হবে ২১ জানুয়ারি। আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারের পালা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। ১৮ ডিসেম্বরের রাতের ঘটনার পর নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ ভাবে হবে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।