দীর্ঘ চার বছরের বিরতির পর ফের একবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং সে দেশের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভার অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক সফরে গিয়েছেন শাহবাজ। সেখান থেকেই ওয়াশিংটন পাড়ি দিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন তিনি।
বৈঠকের আগে দুই পাকিস্তানি নেতার উদ্দেশে প্রকাশ্যে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘শাহবাজ শরিফ একজন মহান নেতা। আর আসিম মুনির এক অসাধারণ মানুষ।’ ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে ঘিরে কূটনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। অনেকেই মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বজায় রাখতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন করে সাজাচ্ছে আমেরিকা।
সূত্রের খবর, বৈঠকে উঠে এসেছে আমেরিকা-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বাণিজ্যিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, ইসলাম-ভীতি, সন্ত্রাস দমন এবং আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির মতো একাধিক স্পর্শকাতর ইস্যু। কাশ্মীর ইস্যু নিয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও ভারত বরাবরই কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে আপত্তি জানিয়ে এসেছে।
সম্প্রতি পহেলাগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সেই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান ও আমেরিকার কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল।
সেনাপ্রধান আসিম মুনির সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিকবার আমেরিকা সফরে গিয়েছেন এবং উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। আফগানিস্তান এবং সন্ত্রাস দমন ইস্যুতে তিনি আমেরিকার বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন। আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে ভারতের বিরুদ্ধে তার কড়া ভাষায় বক্তব্য নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। অন্য দিকে, সন্ত্রাস দমনে নিজেদের ভূমিকা তুলে ধরতে সচেষ্ট ইসলামাবাদ। তাদের দাবি, পাকিস্তান এখন সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত দেশ এবং এই সমস্যা মোকাবিলায় তারা বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি পাকিস্তান ও আমেরিকার মধ্যে একটি নতুন চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মাধ্যমে পাকিস্তানের খনিজ তেলভান্ডার উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করবে দুই দেশ। বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করবে।
বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও আমেরিকা ও পাকিস্তানের সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। যেখানে ভারতের উপর আমেরিকা ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে এবং রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ না করলে আরও শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সেখানে পাকিস্তানের উপর মাত্র ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপিত রয়েছে। এমনকি সেই হার আরও কমানোর বিষয়েও আলোচনা চলছে বলে জানা গিয়েছে।
সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবারের বৈঠক পাকিস্তান-আমেরিকা সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচক হতে পারে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি কৌশলগত দিক থেকে কতটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, তা সময়ই বলবে।