ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘কেরিয়ার ধ্বংস করতে চাই না’। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বুধবার হাসতে হাসতে সাংবাদিকদের এই কথা জানান। সেই সঙ্গে মোদীকে ‘মহান নেতা’ এবং নিজের ‘বন্ধু’ বলেও দাবি করেন। তবে কূটনৈতিক মহল এটাকে প্রশাংসার আড়ালে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি বলে মনে করছেন। সেই সঙ্গে ট্রাম্পের আরও দাবি, ভারত নাকি রুশ তেল কেনা বন্ধ করে দেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আশ্বাস দিয়েছে ভারত।
বুধাবর সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘মোদী দারুণ মানুষ। মোদী ট্রাম্পকে খুবই পছন্দ করেন। তবে পছন্দ করা শব্দটি আপনারা আবার খারাপভাবে ব্যাখ্যা করবেন না। আর আমি কখনই মোদির রাজনৈতিক কেরিয়ার ধ্বংস করতে চাই না।‘ তবে মোদীর ‘কেরিয়ার’ নিয়ে মন্তব্য করার আগেই ভারতকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প আচমকা দাবি করেন, ‘মোদি আজ আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে ভারত আর তেল কিনবে না। আমরা চাই চিনও সেই একই পথে হাঁটুক।‘
ট্রাম্পের কথায়, ‘আমি বহু বছর ধরে ভারতকে দেখছি। অসাধারণ দেশ। এক সময় প্রতি বছর একজন নতুন নেতা পেত ভারত। বর্তমানে আমার বন্ধু অনেক দিন ধরেই আছেন।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও জানান, ‘উনি নিশ্চিত করেছেন , রাশিয়া থেকে তেল কেনা হবে না। এটা একেবারে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করা সম্ভব না, কিন্তু প্রক্রিয়াটা দ্রুত শেষ হবে।’
ট্রাম্পের মতে, ভারত তেল না কিনলে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। যা ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে সাহায্য করবে। তাঁর ভাষায়, ‘এটা একটা বড় পদক্ষেপ। রাশিয়াকে চাপে ফেলতে এটা প্রয়োজন।’ ট্রাম্পের সেই দাবি এবার উড়িয়ে দিল বিদেশমন্ত্রক। বৃহস্পতিবার বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ‘ফোনে হোক বা সামনাসামনি আলোচনা, গতকাল কোনওটাই হয়নি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে। গতকাল দুই রাষ্ট্রপ্রধান একে অপরকে ফোন করেননি।
বুধবার এক বিবৃতিতে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জায়সবাল বলেছিলেন, ‘ভারত একটি বড় তেল ও গ্যাস আমদানিকারী দেশ। অস্থির পরিস্থিতিতে ভারতীয় উপভোক্তার স্বার্থ রক্ষাই আমাদের নিরবচ্ছিন্ন অগ্রাধিকার। আমাদের আমদানি নীতির লক্ষ্যই এটা।’
’বুধবার ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘যখন ভারত রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনছিল, আমরা তাতে বেশ বিরক্ত হয়েছিলাম। কারণ এতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন তাঁর যুদ্ধে সরাসরি অর্থ সাহায্য পাচ্ছিল।’তিনি বলেন, ‘মোদী আমার বন্ধু, আমাদের সম্পর্ক ভাল, কিন্তু উনি রাশিয়া থেকে তেল কিনছেন— সেটা আমাদের পছন্দ হয়নি। কারণ এতে রাশিয়া-ইউক্রেনের এই হাস্যকর যুদ্ধ আরও বেড়েছে, যেখানে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ মারা গেছেন।’
দীর্ঘদিন ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে চাপ দিয়ে যুদ্ধ থামানোই এখন একমাত্র লক্ষ্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের। সে কারণে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই পুতিন ইউক্রেনীয় ও রাশিয়ান, দু’পক্ষেরই হত্যা বন্ধ করুন। এটা এমন এক যুদ্ধ যা এক সপ্তাহে শেষ হতে পারত, প্রায় চার বছর ধরে চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রতিশ্রুতির পর তিনি আশাবাদী, খুব শিগগিরই ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। তাঁর কথায়, ‘যখন যুদ্ধ শেষ হবে, তখন ওরা আবার বাণিজ্য শুরু করতে পারবে।’
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। ইউক্রেনে আক্রমণের পর রাশিয়ায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ইউরোপে রাশিয়ার তেলের চাহিদা কমতে শুরু করে। তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় রাশিয়া তেল বিক্রিতে বড় ছাড় দিতে শুরু করে। সেই সময় ভারত রাশিয়া থেকে আরও বেশি করে তেল আমদানি করা শুরু করে। আগে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির পরিমাণ ছিল ১ শতাংশেরও কম।
তা বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এরপরই রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। যা দু’দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরায়। রাশিয়া থেকে তেল কেনাকে হাতিয়ার করে ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপায় মার্কিন প্রশাসন। ভারত সেই পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অনৈতিক’ বলেও বর্ণনা করেছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যতদিন চলবে, ততদিন ভারতের উপর আমেরিকা চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একদিকে সস্তা জ্বালানির প্রয়োজন, অন্যদিকে মার্কিন কূটনৈতিক চাপ, এর মাঝে ভারত কী করে, এখন সেটাই দেখার। ভারত যদি রাশিয়ার দিকেই ঝুঁকে থাকে বা আমেরিকার কথা না শোনে, তাহলে ট্রাম্পও যে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না, তা নিয়ে কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন বলে মনে করছে বিশষজ্ঞ মহল।। এমন কোনও বড় পদক্ষেপ করবেন, যা মোদীকে বিপদে ফেলবে অথবা ভারতের রাজনীতিকেও প্রভাবিত করে!