রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ক্রমেই তিতিবিরক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই রাষ্ট্রের চলমান সংঘাত যে গোটা বিশ্বকে নতুন অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সে সম্পর্কে ফের সরাসরি সতর্ক করলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এই ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির নেপথ্যে অন্য দেশগুলিও ‘মদত’ দিচ্ছে। আর তার ফলেই যুদ্ধ আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
ট্রাম্প জানান, তিনি শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বহুবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, ফোনে কয়েক দফায় কথাও বলেছেন। তবু যুদ্ধবিরতি বা সংঘাত প্রশমনের কোনও বাস্তব অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। তাই দুই পক্ষের প্রতি তাঁর ক্ষোভ স্পষ্ট। গত মাসেই সংঘাতে অন্তত ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প, যাঁদের অধিকাংশই সেনা। লাগাতার রক্তপাত তাঁকে গভীরভাবে হতাশ করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের কথায়, ‘আমি চাই, এই হত্যালীলা বন্ধ হোক। সেজন্য আমরা কঠোরভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ এরপরই তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই পরিস্থিতি আমাদের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর কেউই তা দেখতে চায় না।’
এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হচ্ছে, তার গতি অত্যন্ত ধীর, তা দেখে ট্রাম্প খুবই অসন্তুষ্ট। তিনি আর এমন বৈঠকে অংশ নিতে রাজি নন, যেগুলি শুধুই বৈঠক হয়, কিন্তু ফলাফল ‘শূন্য’। লেভিটের ভাষায়, ‘প্রেসিডেন্ট চান বৈঠক থেকে একটি বাস্তব সমাধান উঠে আসুক।’
একই সঙ্গে ট্রাম্প পরিষ্কার জানিয়েছেন, যুদ্ধের অবসান ঘটাতে নিরাপত্তা চুক্তির অংশ হিসেবে আমেরিকা ইউক্রেনকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। কিন্তু মার্কিন প্রস্তাবিত শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর না করায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপর তিনি বেজায় রুষ্ট।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে কিভ সফর করেন মার্কিন স্থলবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিসকল। তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের তৈরি ২৮ দফা শান্তিপ্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। সরকারি ভাবে বিষয়টি নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খোলেনি। তবে পশ্চিমি গণমাধ্যমের দাবি, এই প্রস্তাবে ইউক্রেনকে রুশ অধিকৃত অঞ্চল ফিরে পাওয়ার আশা ছাড়তে বলা হয়েছে, সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীর আকার ছোট করার কথাও বলা হয়েছে। আরও দাবি, জেলেনস্কিকে জানানো হয়েছিল, মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় সামরিক জোট রাষ্ট্রসঙ্ঘের নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা নেটোর কোনও সেনা ইউক্রেনের মাটিতে রাখা যাবে না। এই শর্ত সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ক্রমেই দীর্ঘায়িত হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরাসরি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার মধ্যে এই সংঘাতের ফল যে আরও ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে, সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট হচ্ছে।