ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শুল্ক-যুদ্ধের হুঁশিয়ারি চলছিল। গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের জন্য বিভিন্ন হারে শুল্ক ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভারত-সহ একাধিক দেশের পণ্যের পর চাপানোে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা আগামী ৯ এপ্রিল থেকে। তার আগেই বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে শুল্কে ছাড় নিয়ে আলোচনায় বসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত-সহ মোট তিনটি দেশের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা চলছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এমনটাই দাবি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর একটি রিপোর্টে। বলা হয়েছে, ওই তিন দেশের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ে সমঝোতার আলোচনা চলছে।
এদিকে জানা গিয়েছে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারেন যিনি ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেন। খবরে বলা হয়েছে, সোমবার সফরের পরিকল্পনা করছেন নেতানিয়াহু এবং দুই নেতা। পারমাণবিক সংকট এবং গাজা নিয়েও আলোচনা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিভিন্ন দেশগুলির উপর শুল্ক আরোপে ট্রাম্প যে সময়সীমা ধার্য করেছেন, তার আর তিন দিন বাকি। আগামী ৯ এপ্রিল থেকে বিদেশি পণ্যে বর্ধিত হারে শুল্ক নেবে ওয়াশিংটন। তার আগে তিন দেশের সঙ্গে ট্রাম্পের সমঝোতা হবে কি না, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। জানা গিয়েছে, তিন বন্ধু দেশ, ভারত, ইজরায়েল ও ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে চান ট্রাম্প। যদি ৯ তারিখের মধ্যে তাঁরা সম্মতিতে পৌঁছতে না পারেন, তবে চুক্তি হবে না। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্কই লাগু হবে ভারত, ইজরায়েল ও ভিয়েতনামের উপরে।
সিএনএন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিয়েতনামের সঙ্গে আলোচনার কথা সমাজ মাধ্যমে নিজেই জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর দাবি, সমঝোতার ক্ষেত্রে আমেরিকার পণ্য থেকে শুল্ক পুরোপুরি তুলে নিতেও রাজি ভিয়েতনাম। বাকি দুই দেশের কথা ট্রাম্প কিছু উল্লেখ করেননি। সমাজ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি তো ল্যামের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হল। তিনি আমাকে বলেছেন, আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতায় ওঁরা মার্কিন পণ্যে শুল্কের পরিমাণ শূন্য করে দিতে প্রস্তুত। আমাদের দেশের তরফে ওঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। বলেছি, খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে।’
অন্যদিকে এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ভারত এবং ইজরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা চলছে। যে শুল্কের পরিমাণ ট্রাম্প এর আগে এই দেশগুলির জন্য ঘোষণা করেছিলেন, সমঝোতায় আসলে তা না-ও আরোপ করা হতে পারে। ভারতের উপর ২৬ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। ইজরায়েলের পণ্য থেকে ১৭ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের পণ্য থেকে ৪৬ শতাংশ শুল্ক নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ৯ এপ্রিল রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে বিদেশি পণ্যে নতুন হারে শুল্ক কার্যকর করবে আমেরিকা।
শুল্ক ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমঝোতার রাস্তা বাতলে ছিলেন ট্রাম্প। জানিয়েছিলেন, কোনও দেশ যদি আমেরিকার জন্য কিছু করে, তবে অবশ্যই শুল্ক তুলে নেওয়ার কথা ভাববেন । কিন্তু তাঁর এই শুল্ক আরোপের বার্তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা জবাব দেয় চিন। চিনের পণ্যে ট্রাম্প ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। বৃহস্পতিবার বেজিং ঘোষণা করে, আমেরিকার পণ্যেও বাড়তি আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক নেওয়া হবে। এ ছাড়া, আমেরিকার ১১টি সংস্থার বাণিজ্য চিনে বন্ধ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজের রপ্তানিতেও কাটছাঁট করা হয়েছে। এ ছাড়া, আমেরিকার গাড়ির উপর শুল্ক ঘোষণা করেছে কানাডা।
কানাডা-সহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধে জড়িয়েছে আমেরিকা। ট্রাম্প আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ‘যে দেশ আমেরিকার আমদানি পণ্যে যত বেশি শুল্ক চাপাবে আমেরিকা ঠিক ততটাই ওই দেশের উপর শুল্ক আরোপ করবে। সেক্ষেত্রে কোনওরকম ছাড় দেওয়া যাবে না।’ গত ২ এপ্রিল অর্থাৎ মুক্তি দিবসে বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।