বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানী শহর ঢাকা-সহ একাধিক এলাকা। বাংলাদেশের নরসিংদী থেকে ১৪ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে মাটি থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পের উৎসস্থল। বাংলাদেশে ভূমিকম্পের কারণে অন্তত ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকায় মৃতের সংখ্যা তিন জন। আহত ৫০-এরও বেশি।
ভূমিকম্পে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ি ধসে এবং অন্যান্য দুর্ঘটনায় হতাহতের খবরে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। শোকবার্তায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা এবং পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় দ্রুত উদ্ধার কাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্রে খবর, ঢাকার কসাইটুলি এলাকার একটি বহুতলের রেলিং ভূমিকম্পের জেরে ধসে পড়ে। সেই সময় রাস্তা দিয়ে যাওয়া পথচারীদের মাথায় রেলিংয়ের ধ্বংসাবশেষ এসে পড়ে। মৃতদের মধ্যে এক ডাক্তারি পড়ুয়া রয়েছে বলে খবর। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং গাজীপুরের তাজউদ্দীন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়।
চিকিৎসা চলাকালীনই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মৃত ডাক্তারি পড়ুয়ার নাম রাফিউল ইসলাম। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে খবর, মৃতদের মধ্যে রয়েছে একজন শিশু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পের কারণে রাস্তার ধারের দেওয়াল ধসে ১০ মাসের শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এ দিন প্রথমে স্থানীয়রাই উদ্ধার কাজে হাত লাগান। এরপর খবর পেয়ে তড়িঘড়ি সেখানে এসে পৌঁছয় পুলিশ।
বাংলাদেশের টঙ্গির বিসিক এলাকায় একটি পোশাকের কারখানা ভূমিকম্পের জেরে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কারখানা থেকে বেরতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে আহত হন কমবেশি ২০০ শ্রমিক। ঢাকার আরমানিটোলার কসাইটুলিতে একটি ছ’তলা বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবনের দেওয়াল, শেখ মুজিব হলের পুরোনো ভবনের তিন তলার ছাদে ফাটল ধরার খবর মিলেছে।
পাশাপাশি টঙ্গি রেলস্টেশন রোড সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত একটি বাড়ি, ঢাকার স্বামীবাগ এলাকা এবং বাড্ডা লিংক রোডের একটি বাড়ি ভূমিকম্পের জেরে হেলে গিয়েছে বলে খবর। শুক্রবার ভূমিকম্পের সময়ে মিরপুর স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিন ছিল। কম্পন অনুভূত হয় স্টেডিয়ামেও। প্রায় তিন মিনিট বন্ধ ছিল খেলা।
ভূমিকম্পের সময়ে আতঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া তানজির হোসেন হাজি মুহম্মদ মুহসীন হলের চারতলা থেকে ঝাঁপ দেন। তাঁর একটি পা ভেঙেছে বলে জানা গিয়েছে। আপাতত ওই পড়ুয়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। এখনও পর্যন্ত ভূমিকম্পের জেরে ক্ষয়ক্ষতির নির্দিষ্ট কোনও তথ্য বাংলাদেশের তরফে দেওয়া হয়নি। সূত্রের খবর, ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে প্রশাসন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে এই ধরনের কম্পন হয়নি। এটা একটি সতর্কবার্তা। এই বিষয়কে মাথায় রেখে আগামীর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বিল্ডিং আইন মেনেই ঢাকায় নির্মাণ হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে যে বিল্ডিংগুলি আগে হয়েছে, তার মধ্যে ৯০ শতাংশই ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো ক্ষমতা রাখে না বলে জানিয়েছেন হাসান।
বাংলাদেশের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার জানিয়েছেন, শুক্রবারের কম্পন সমসাময়িক কালের মধ্যে সর্বোচ্চ। যে অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছে, তা ইন্দো-বার্মা টেকটোনিক প্লেটের অংশ বলেও জানিয়েছেন হুমায়ুন আখতার।