‘ফ্যাসিস্ট’ ইউনুসকে হঠাতে ফের ‘মুক্তিযুদ্ধে’র ডাক দিলেন শেখ হাসিনা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

দেশবাসীর কাছে পেশ করলেন ২১ দফা দাবি

ঢাকা, ১১ আগস্ট– স্বৈরাচারী ইউনূস সরকারকে উৎখাতের ডাক দিয়ে এবার গণ আন্দোলনে নামতে চলেছেন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। এজন্য তিনি সামাজিকমাধ্যমকে ব্যবহার করে দেশজুড়ে এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। স্বৈরাচারী ইউনূস সরকারকে উৎখাত করে ফের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে আওয়ামী লীগ নেত্রী জনগণের সামনে ২১ দফা দাবি পেশ করেছেন। হাসিনা দেশবাসীকে এই গণ আন্দোলনে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, চক্রান্ত করে নির্বাচিত সরকারকে অসাংবিধানিক ভাবে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রাস করেছে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারকে সরিয়ে ফের দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে হবে। কার্যত আওয়ামী লীগ নেত্রী ১৯৭১ সালের মতোই দ্বিতীয়বার মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

রবিবার আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডলে হাসিনা যে ২১ দফা দাবি তিনি তুলে ধরেন, সেগুলির মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, নারী ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা এবং জাতির জনক শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহ্যমণ্ডিত ধ্বংসপ্রায় স্থানগুলির সংস্কার তার অন্যতম।


প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে পাক সেনাবাহিনী দেশজুড়ে গণহত্যা চালিয়েছিল। দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নেমে এসেছিল চরম বিপর্যয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরুষদের হত্যা এবং নারীদের ধর্ষণ ও পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় আজও শিউরে ওঠে আপামর বাঙালি। সেই গণহত্যাকাণ্ডে পাক সেনাবাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় প্রায় তিন লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করে। সে সময় প্রাণ বাঁচাতে বহু পরিবার ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী পাকিস্তানিদের হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করতে আমরণ মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ  মুজিবুর রহমান। এই যুদ্ধের আহ্বানের সময় মুজিব তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম! এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম!’ মুজিবের সেই উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশবাসী ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে। তাঁর সেই লড়াইয়ে সঙ্গী ছিলেন হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে দেশের স্বাধীনতাকামী গরিব কৃষক থেকে শুরু করে শিক্ষিত সম্প্রদায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতে গিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীও পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাসের লড়াইয়ে পরাজিত হয় পাক সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের প্রায় ৯৩ হাজার সেনাকে বন্দি করে ভারত। তারপর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক উত্থান-পতন ঘটেছে। এভাবে কেটে গিয়েছে প্রায় ৫৩ বছর। কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।

সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি এবং জামাত সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রমাদ গুনছিল। অবশেষে কোটা বিরোধী আন্দোলনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করে। পিছন থেকে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছিল তারা। ছাত্রদের সেই আন্দোলনের মুখে তাঁদের দেওয়া শর্ত অনেকাংশে মেনে নিলেও সেই আন্দোলন বন্ধ হয়নি।

উল্লেখ্য, এই কোটা বিরোধী সংস্কার নিয়ে গণ অভ্যুত্থানের জেরে গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন হাসিনা। তিনি বিশেষ বিমানে চেপে ভারতে চলে আসেন। তিনি দেশ ছাড়ার পর পরই লুটপাট ও ভাঙ্গচুর চালানো হয় ধানমণ্ডির মুজিব বাসভবনে। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ তথা প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের তত্ত্বাবধানে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকার ক্ষমতায় আসার পরই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার এবং আওয়ামী লীগের কর্মী এবং সমর্থকদের আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে এসেছে বার বার। বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু মন্দির ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোও ভেঙে পড়েছে। আর এই দুঃসময়ে ফের গণ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী ও মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি ভারতে বসেই দেশবাসীকে অবগত করে একটি দীর্ঘ খোলা চিঠি দিয়েছেন। তাতে লিখেছেন, দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। মানুষ ন্যূনতম নাগরিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। সংবাদমাধ্যম শিকলবন্দি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মহিলারা অত্যাচারিত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিকে তিনি ১৯৭১ সালে দেশজুড়ে খান সেনারা যেভাবে অত্যাচার শুরু করেছিল, তার সঙ্গে তুলনা করেছেন।