ঢাকায় জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ, আহত ৩৬

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ফের অশান্ত বাংলাদেশ। শনিবার ঢাকায় ‘জুলাই যোদ্ধা’দের বিক্ষোভ ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল সংসদ ভবন চত্বর। আহত আন্দোলনকারীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের দাবিতে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ অবস্থান দ্রুত সহিংস সংঘর্ষে পরিণত হয়। পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের জবাবে বিক্ষোভকারীরা ইট-পাথর ছোঁড়ে। এমনকি সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশবাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সংঘর্ষে অন্তত ৩৬ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এই সংঘর্ষের জেরে ঢাকার সংসদ ভবনের চারপাশে এখনও থমথমে পরিস্থিতি। শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‍্যাফ মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামেও।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ছাত্রদের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। তাঁদের দাবি, ‘জুলাই সনদ’-এ আহত ও নিহতদের স্বীকৃতি, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের বিষয়গুলি উপেক্ষা করা হয়েছে। শনিবার ঢাকার রাস্তায় ‘স্বীকৃতি না দিলে রুখে দাঁড়াব’ শ্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে ছাত্র আন্দোলনকারীদের মিছিল। বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘আমরা দেশের গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিয়েছি। এখন সরকার আমাদের ত্যাগ ভুলে যাচ্ছে।’


অন্যদিকে, পুলিশের বক্তব্য, আন্দোলনকারীরা প্রথমে হামলা চালায়। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে বাধ্য হয়েই পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

ঘটনার পটভূমিতে রয়েছে শুক্রবারের ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষর, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু এনসিপি (ন্যাশনাল সিটিজেন্স পার্টি) অভিযোগ করেছে, ‘আইনি ভিত্তি অস্পষ্ট’ থাকায় তারা সনদে সই করেনি। সরকার অবশ্য জানিয়েছে, জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পথ এখনও খোলা আছে। তবুও, আন্দোলনকারীদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের মূল দাবি উপেক্ষা করে এই সনদে শুধু রাজনৈতিক স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ঢাকায় শনিবারের সহিংসতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে নতুন করে জটিল করে তুলেছে। অনেকের আশঙ্কা, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে তা আবারও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারে। ঠিক যেমন দীর্ঘ আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা এখন পুলিশি নিয়ন্ত্রণে। প্রশাসন জানিয়েছে, প্রয়োজনে সেনা নামানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এক বছর আগে যে আন্দোলনকারী ছাত্ররা হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ইউনূসের ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত করেছিলেন, তাঁরাই আবার বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা অন্তর্বতী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে যেন প্রচ্ছন্ন হুমকি লক্ষ্য করা গিয়েছে। ফলে এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশে নতুন করে যে গণঅভ্যুত্থান হবে না, তা নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারছেন না।