ভোট শুরুর আগেই গোটা পাকিস্তানের ইন্টারনেট বন্ধ

প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে নওয়াজ শরিফ, বেগুন প্রতিকে লড়ছে ইমরানের দল

ইসলমাবাদ, ৮ ফেব্রুয়ারি– পাকিস্তানে শুরু হল ভোট৷ বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় সকাল ৯ টায় ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই গোটা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে সে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রক৷ আর্থিক দুরাবস্থা, চরম ডামাডোলের মাঝেই বৃহস্পতিবার ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হল জাতীয় নির্বাচন৷ এবারের নির্বাচনে লড়তে পারছেন না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান৷ আপাতত প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌডে় এগিয়ে রয়েছেন নওয়াজ শরিফ৷ নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক অশান্তির আশঙ্কা করছে প্রশাসন৷
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রক জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ মেনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ গোটা দেশে ইন্টারনেট বন্ধের এমন নজির পাকিস্তানের ইতিহাসে নেই৷ ভোট বানচাল করতে সমাজমাধ্যমে উস্কানিমূলক প্রচার চালানো হতে পারে, যার ফলে গোটা দেশের শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে, এই মর্মে গোয়েন্দা রিপোর্ট পাওয়ার পরই ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে পাক নির্বাচন কমিশন৷
এ দিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ, চলবে বিকেল ৫টা অবধি৷ তবে প্রয়োজন হলে নির্বাচনের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে৷ মোট ১২.৮ কোটি নাগরিক ভোট দেবেন নির্বাচনে৷ এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পাকিস্তানের সেনা প্রধান আসিম মুনীর, নওয়াজ শরিফ ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি৷ গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে সবথেকে বেশি সংখ্যক ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিল ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ৷ তবে এবারের নির্বাচনে পিটিআই-র স্বীকৃতিও বাতিল করে দিয়েছে কমিশন৷ তাঁর দলের একাধিক নেতাকেও অনুমতি দেওয়া হয়নি৷  পিটিআই-র কর্মীরা  যে কয়েকজন অনুমতি পেয়েছেন, তারা বেগুন প্রতীক নিয়ে লড়ছেন৷
তবে নির্বাচন কমিশনের আশঙ্কা যে অমুলক নয় তা প্রমাণ করে দিয়েছে গত কয়েকদিন যাবৎ লাগাতার পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া নানা হিংসার ঘটনা৷ পাকিস্তানে এবারের ভোটকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে একাধিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে৷ বালুচিস্তানে বুধবারের বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতু্য বেডে় হয়েছে ২৪৷ প্রচার চলাকালীন সময়ে রাজনৈতিক সভা সমাবেশের উপর আক্রমণের একাধিক ঘটনা ঘটে৷ পাশাপাশি থানা ও সেনা ছাউনিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা৷ থানায় আক্রমণের ঘটনায় ১০ জন পুলিশ কর্মী নিহত হন৷ বুধবার বালুচিস্তানে নির্দল প্রার্থীর দফতরের বাইরে বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন মারা যান৷ পরে মৃতু্য বেডে় হয় ২৪৷
এবারের নির্বাচনে যে সমস্ত নেতাদের খবরকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তারমধ্যে জেলবন্দি ইমরান খান একজন৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইমরান খান এদিন পোস্টাল ব্যালটে আদিয়ালা জেল থেকে ভোট দিয়েছেন৷ তবে সেই সুযোগ পাননি তাঁর জেলবন্দি স্ত্রী বুশরা বিবি৷ তিনি জেলে যাওয়ার আগেই পোস্টাল ব্যালট বিলির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে জানা যায়৷
অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের যারা ডাকযোগে ভোট দিতে পেরেছেন তাদের মধ্যে প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি, পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চৌধুরী পারভেজ এলাহি, আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রধান শেখ রশিদ এবং প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরীও রয়েছেন৷ এদিকে, জেল বন্দি ইমরানের হয়ে দলের কাজ অনেকটাই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে দুই ছেলে কাশিম খান ও সুলেইমান খান৷ বুধবার প্রচার শেষ হওয়ার আগে দুই ছেলে বাবা মায়ের হয়ে এক্স হ্যান্ডেলে দেশবাসীর প্রতি ইমরানের পার্টি পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ পার্টির হয়ে ভোট চেয়েছেন৷ প্রচারেও সক্রিয় ছিল দুই ভাই৷
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডন’ জানিয়েছে, জেল প্রশাসন শুধুমাত্র সেই কয়েদিদের ভোট দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে যাদের বৈধ কম্পিউটারাইজড জাতীয় পরিচয়পত্র (সিএনআইসি) রয়েছে৷ বন্দিদের অধিকাংশের আসল সিএনআইসি না থাকায় পোস্টাল ব্যালটে করে ভোট দেওয়ার সংখ্যাও কম হয়েছে৷ একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “অপরাধী, ডাকাত, চোর, জঘন্য অপরাধে দণ্ডিত এবং বিচারাধীন বন্দি (ইউটিপি) আদিয়ালা কারাগারে আটক রয়েছেন৷” তিনি বলেন, বেশিরভাগ অপরাধী তাদের পরিচয় এড়াতে সিএনআইসি রাখে না৷ আর বিচারাধীন বন্দিদের পরিচয়পত্র সাধারণত থানাগুলো আটকে রাখে৷