বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর ঢাকা–ইসলামাবাদ সম্পর্ক যে দ্রুত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, তার আরেকটি নমুনা দেখা গেল রবিবার। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে এসে নোঙর করল পাকিস্তানি নৌসেনার ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যুদ্ধজাহাজ ‘পিএনএস সঈফ’। একই সময়ে তিন দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছলেন পাক নৌসেনার প্রধান অ্যাডমিরাল নাভিদ আশরাফ। একসময়ের রাজনৈতিক দূরত্ব ভুলে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর ব্যস্ত কূটনৈতিক তৎপরতা এখন নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও।
ঢাকায় পৌঁছেই অ্যাডমিরাল আশরাফকে ‘গার্ড অফ অনার’ দিল বাংলাদেশ নৌসেনা। এরপর নৌসেনার সদর দপ্তরে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশের নৌসেনাপ্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসানের সঙ্গে। আইএসপিআর এই সাক্ষাৎকে ‘সৌজন্য বৈঠক’ বললেও সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আগামীতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ইঙ্গিত স্পষ্ট। নৌসেনা প্রধানরা আলোচনা করেছেন সামরিক প্রশিক্ষণ, পেশাগত অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং দুই বাহিনীর সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার সম্ভাবনা নিয়ে। একই দিনে আশরাফ বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেন।
এই সফরের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরে ঢোকে পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ ‘পিএনএস সঈফ’— ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম এই জাহাজটি তিন দিন বাংলাদেশের নৌঘাঁটিতে নোঙর করা থাকবে। সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদসংস্থা ‘বাসস’ এই সফরকে ‘শুভেচ্ছা সফর’ বললেও বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকা–ইসলামাবাদ সামরিক সহযোগিতা যে নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা এই আগমন থেকে অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে।
চট্টগ্রাম অবস্থানকালে পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজের ক্যাপ্টেন এবং অন্যান্য আধিকারিকরা ঘুরে দেখবেন বাংলাদেশ ন্যাভাল অ্যাকাডেমি, নৌঘাঁটি এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানগুলি। অন্যদিকে, বাংলাদেশি নৌসেনা কর্মীরাও ‘পিএনএস সঈফ’ পরিদর্শন করবেন বলে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে বাংলাদেশের সামরিক প্রতিনিধিদল পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল। সেই সফরের পরপরই এবার পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিনিধিদের এমন উচ্চস্তরের সফর ঘিরে কূটনৈতিক জল্পনা আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে— দক্ষিণ এশিয়ার বদলে যাওয়া সম্পর্কের অক্ষরেখায় কি নতুন শক্তি হিসেবে উঠে আসছে ঢাকা–ইসলামাবাদ সহযোগিতা?
আগামী ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম ছাড়বে পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ। তবে এই সফরের রাজনৈতিক প্রতিধ্বনি যে বাংলাদেশের রাজনীতি ও দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে, তা নিয়ে এখন আর কোনও সংশয় নেই।