ভিসা ছাড়াই কূটনীতিকদের যাতায়াত, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কে নয়া মাইলফলক। এবার দুই দেশের কূটনীতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসা ছাড়াই একে অপরের দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে একমত হল ঢাকা ও ইসলামাবাদ। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

বুধবার ঢাকায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী মহসিন নকভি। সেখানেই দুই দেশের মধ্যে ‘ভিসা মুক্ত প্রবেশাধিকার’ সংক্রান্ত সমঝোতা চূড়ান্ত হয়। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য এই সুবিধা কার্যকর হবে। তবে এই ব্যবস্থা কবে থেকে চালু হবে, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।

বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, সন্ত্রাস দমন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, মাদক ও মানবপাচার প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। গঠন করা হবে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি, যার নেতৃত্বে থাকবেন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের সচিব খুররম আঘা। এছাড়া, পুলিশি প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহযোগিতার পথে হাঁটবে দুই দেশ। বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল শীঘ্রই ইসলামাবাদের ন্যাশনাল পুলিশ অ্যাকাডেমি পরিদর্শনে যাবে বলে জানানো হয়েছে।


ঢাকায় পাক মন্ত্রীকে ‘গার্ড অফ অনার’ দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীর এই সফর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও সুদৃঢ় হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সম্পর্ক জটিল ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে উভয় দেশ। গত বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছিল, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হবে। বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে পাকিস্তানের নাগরিকরা যেন সহজে বাংলাদেশে আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সব দূতাবাস ও কনস্যুলেটে।

সব মিলিয়ে, এই নতুন ভিসাবিহীন যাতায়াতের সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়নের বার্তা দিচ্ছে। পাশাপাশি, দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক বলেই দেখছেন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল।