১৯৭১-এর গণহত্যায় ক্ষমা চাওয়ার ইস্যুতে ফের তোলপাড়

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত গণহত্যার জন্য পাকিস্তান ক্ষমা চাইবে কি না—সেই ঐতিহাসিক প্রশ্ন ফের সামনে এল পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী তথা উপ-প্রধানমন্ত্রী ইশাক দার–এর বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে। রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা, উত্থাপিত হয়েছে পুরনো ক্ষতের প্রসঙ্গও।

শনিবার রাতে ঢাকায় পৌঁছে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দার। এর মধ্যে ছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বিএনপি–র একটি প্রতিনিধি দলও। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে বিএনপির নেতা শ্যামা ওবায়েদ জানান, বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার কথাও আলোচনা হয়।

তবে বৈঠকের মূল আকর্ষণ ছিল মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ। নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি-র নেতারা পাকিস্তানের কাছে সরাসরি জানতে চান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে ইসলামাবাদের বর্তমান অবস্থান কী। দলের প্রতিনিধি আখতার হোসেন বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমে বলেন, “পাকিস্তানকে অবশ্যই স্পষ্টভাবে জানাতে হবে, ১৯৭১-এর সেই ঘটনাগুলিকে তারা কীভাবে মূল্যায়ন করে।”


জামাত-ই-ইসলামির নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের–ও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া জামাতের এই নেতাকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এই প্রসঙ্গে দুই দেশের সরকারকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলা উচিত।”

পরে ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ইশাক দার বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের এক নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তান। আমরা চাই নাগরিক সমাজ, সংবাদমাধ্যম এবং যুব সমাজকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে। ঢাকা থেকে লাহোর, করাচি থেকে চট্টগ্রাম—দুই দেশের যুবকদের একত্রিত করে অর্থনৈতিক অগ্রগতি গড়ে তুলতে চাই আমরা।”

এই সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনীতিক মহল। কারণ, ২০১২ সালের পর এই প্রথম কোনও উচ্চপর্যায়ের পাকিস্তানি নেতা ঢাকা সফরে এলেন। এর আগে সেই বছরই তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইসলামাবাদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইশাক দারের সফর দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। তবে ১৯৭১-এর গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান না জানানো পর্যন্ত সেই সম্পর্ক কতটা এগোবে, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না।