আমেরিকার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বরাদ্দ কাটছাঁট করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। নাসা এবং ক্যানসার গবেষণার ক্ষেত্রেও বরাদ্দ ছেঁটেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ শতাংশের বেশি আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রী ভর্তি করলে বা জাতি বা লিঙ্গ বিবেচনা করলে তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে নির্দেশিকা জারি করেছে আমেরিকা।
এই আবহেই আমেরিকার এমআইটি ছাড়তে চলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী এস্থার ডাফলো। আগামী বছর তাঁরা সুইজারল্যান্ডের ইউনিভর্সিটি অব জুরিখে যোগ দেবেন বলে খবর। সেখানে তাঁরা ‘সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ইকনমিকস’ গড়ে তুলবেন বলে জানা গিয়েছে।
নোবেলজয়ী এই দম্পতি ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগ দেবেন। তাঁরা ‘লেমান ফাউন্ডেশন প্রফেসর অব ইকনমিকস’ হিসেবে কাজ করবেন। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন ব্রাজিলের লেমান ফাউন্ডেশনের ২৬ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ, আনুমানিক ৩২ মিলিয়ন ডলার অনুদানে তৈরি নতুন কেন্দ্র ‘লেমান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট, এডুকেশন অ্যান্ড পাবলিক পলিসি’।
জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ফ্লোরিয়ান সমাজ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার ডাফলো আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যা এক ঐতিহাসিক ঘটনা। তাঁদের আগমন আমাদের গবেষণার মান ও আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে আরও বাড়াবে।‘
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মাইকেল শেপম্যান জানান, ‘দু’জনেই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে সমাজের কল্যাণের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। আমাদের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।‘
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে এস্থার ডাফলো বলেছেন, ‘নতুন কেন্দ্র আমাদের আগের কাজকে আরও বিস্তৃত করবে। যেখানে গবেষণা, ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ এবং নীতি নির্ধারণের বাস্তব প্রয়োগ মিলবে।‘
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের গবেষণা ও নীতি-নির্ভর কাজের জন্য আদর্শ পরিবেশ দেবে বলে বিশ্বাস।‘ এমআইটি-র সঙ্গে আংশিকভাবে তঁরা যুক্ত থাকবেন বলে দু’জনেই জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁদের তৈরি করা সংস্থা ‘অবদুল লতিফ জামিল পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাব’-এর পরিচালনা তাঁরা চালিয়ে যাবেন বলে খবর।
এমআইটি সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসনের নতুন গবেষণা তহবিল নীতির বিরোধিতা করেছে। এমআইটি প্রেসিডেন্ট স্যালি কর্নব্লুথ মার্কিন শিক্ষাসচিব লিন্ডা ম্যাকমোহনকে একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘আমরা এই নীতি মানতে পারন না। এই নীতি গবেষণার স্বাধীনতা ও বৈজ্ঞানিক মেধার মূল্যায়নকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করে।‘
ব্রাউন, ভার্জিনিয়া, ডার্টমাউথ ও ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ও এই নীতি নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতির মধ্যেই আমেরিকা ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অভিজিৎ ও ডাফলো।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৫ সালের আগস্টে আমেরিকায় বিদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। সব থেকে বেশি পড়ুয়ার সংখ্যা কমেছে আফ্রিকা, এশিয়া ও আরব দেশগুলোর। ভারতের পড়ুয়ার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। কঠোর ভিসা নীতি, পড়ুয়াদের সামাজিক মাধ্যম যাচাই এবং ১৯টি দেশের উপর আরোপিত ট্রাভেল ব্যান, সব মিলিয়ে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার পরিবেশ ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।