গাজা যুদ্ধবিরতিতে নতুন আলোচনার সূচনা, কাতার–মিশরের মধ্যস্থতায় এগোচ্ছে আলোচনা

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতির আশার আলো জ্বলছে। কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় ইজরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিরা সম্প্রতি কায়রোতে বৈঠক করেছেন বলে কূটনৈতিক সূত্রের খবর। আমেরিকাও এ আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।

বৈঠকে যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি জিম্মি মুক্তি, মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং সীমান্তে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করলেও চূড়ান্ত চুক্তির রূপরেখা এখনও তৈরি হয়নি।

ইজরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজা সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কোনও স্থায়ী চুক্তি সম্ভব নয়। অন্যদিকে হামাসের দাবি, যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে অবরোধ শিথিল করতে হবে এবং গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণ পৌঁছানোর রাস্তা খুলে দিতে হবে।


মার্কিন প্রশাসন বলছে, দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য উভয় পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিতে হবে। ওয়াশিংটন চাইছে, আগামী মাসের মধ্যেই অন্তত একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হোক, যাতে মানবিক সংকট কিছুটা লাঘব হয়।

কূটনৈতিক মহলের মতে, কাতার ও মিশরের এই উদ্যোগ ব্যর্থ হলে গাজায় সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। ইতিমধ্যেই হাজার হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু এবং লক্ষাধিক মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মহলে চাপ বাড়ছে— যুদ্ধবিরতি ছাড়া বিকল্প নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে কাতার ও মিশর একটি নতুন বিরামচুক্তি প্রস্তাবের খসড়া প্রস্তুত করছেন, যাতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, কিছু বন্দির মুক্তি এবং অতিক্তমান মানবিক সহায়তার ধারাবাহিক প্রবাহ। তবে ইস্রায়েল এই প্রস্তাবের কয়েকটি ধাপ খারিজ করেছে, যা হামাসের পক্ষ থেকে গ্রহনযোগ্য নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে । এর পাশাপাশি, হামাসের প্রতিনিধিরা কায়রোতে পৌঁছেছেন যাতে এসব আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করা যায়।

এদিকে গাজার উত্তরে ইস্রায়েলি সেনাবাহিনী সেখানকার প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন, এবং হামাসের প্রতিনিধি দল যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পুনরায় চালু করার আশায় কায়রোয় পৌঁছেছেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি হলো, ইস্রায়েলি সেনাবাহিনী গাজা থেকে নিরাপত্তার আশ্রয়দাতা তুষারাংশে জনসাধারণ স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিরস্ত্র আফ্রিনশরণের পরিসরে তাঁরা তাঁবু ও আশ্রয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করছেন— এটি পরিচালিত হবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার মাধ্যমে।

ইস্রায়েলের ভেতরেও এক অভ্যুত্থান দেখা যাচ্ছে— জনগণ ব্যাপক আন্দোলনে নেমে এসেছে, তারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিদের মুক্তি দাবি করছে। রবিবার দেশজুড়ে একটি সারাদেশ ব্যাপী ধর্মঘট চলেছে, যা রাজধানী তেল্ আবিব ও জেরুসালেমে ব্যাপক ব্যবসায়িক ও যানজটের সৃষ্টি করেছে।

সবমিলিয়ে পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটপূর্ণ। একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ছাড়া গাজার সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন বলে আন্তর্জাতিক মহলের একাধিক বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন।