বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ নেপাল, মৃত ২১

ফাইল চিত্র

নেপালের কেপি শর্মা ওলি সরকারের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরেই ছিল দুর্নীতির অভিযোগ। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে নেপালে নিষিদ্ধ করা হয় এক্স, ফেসবুক, ইউটিউব-সহ প্রায় সব ক’টি সমাজমাধ্যমের ব্যবহার। তার প্রতিবাদে সে দেশের তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নেমেছেন সরকারের বিরুদ্ধে। প্রথমে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল, কিন্তু পরে ধীরে ধীরে ব্যাপারটি উত্তপ্ত হতে থাকে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরানোর জন্য লাঠিচার্জ করতে শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করা হয় রাজধানীতে। এরপরেও বিক্ষোভ চলতে থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে নামানো হয় সেনা এবং ‘শুট অ্যাট সাইট’ আদেশ দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। আহত হয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি মানুষ।

২০২২ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল শ্রীলঙ্কায়। ২০২৪-এ বাংলাদেশেও ঘটেছে একই ঘটনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়ে যান। এবার নেপালেও তৈরি হল একইরকম বিক্ষোভের পরিস্থিতি। বিক্ষুব্ধ জনতা ঢুকে পড়ে সংসদ ভবনে এবং সেখানে তারা ভাঙচুর চালায়। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনের জানলা-দরজা লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়েন। ইতিমধ্যে বিদ্রোহীরা সংসদ ভবনের ছাদ এবং করিডর দখল করে ফেলেছেন। নষ্ট হয়ে গিয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথিপত্র।

গত ৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স ইত্যাদি সব সোশ্যাল মিডিয়া নেপালে নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ নেপাল সরকার দাবি করে যে, এই সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলি নেপাল প্রশাসনের সঙ্গে সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয়নি। নেপাল সরকার ৭ দিনের সময়সীমা দিয়েছিল সংস্থাগুলিকে, কিন্তু সেই সময়সীমা মানেনি ২৬টি সমাজমাধ্যম। ২০২০ সাল থেকে অনেক পিটিশন জমা পড়েছিল লাইসেন্সবিহীন প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট এবং বিজ্ঞাপন প্রচারের অভিযোগে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সরকার হস্তক্ষেপ করে। সেই কারণেই সমাজমাধ্যমগুলিকে নিষিদ্ধ করে নেপাল সরকার। এই সিদ্ধান্তে বিক্ষুব্ধ নেপালের তরুণ প্রজন্ম। যদিও ভাইবার, টিকটক, ইন্সটাগ্রাম, উইটক, টেলিগ্রাম ইত্যাদি কিছু সমাজমাধ্যমকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।


বিরোধী দলগুলির দাবি, সরকারের তরফ থেকে সমাজমাধ্যম নিষিদ্ধ করার পেছনে রয়েছে ভিন্ন উদ্দেশ্য। সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে ব্যবহার করে যেন কেউ সরকারের বিরুদ্ধে কোনোরকম প্রতিবাদ জানাতে না পারে সেই কারণেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে সমাজমাধ্যমগুলিকে। সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত যে বিল পাশ করা হয়েছে সেটি ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। দাবি করা হচ্ছে যে, এই পদক্ষেপ আসলে দেশের নাগরিকদের স্বাধীনতা হরণ করার চেষ্টা। সোমবার সন্ধ্যাবেলায় ডাকা হয় ক্যাবিনেটের বৈঠক। কাঠমান্ডুর উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল এই বৈঠকে।

বিক্ষোভের কারণে প্রাথমিকভাবে কারফিউ জারি করা হয় বানেশ্বর এলাকায়। পরে প্রধানমন্ত্রী বাসভবন বালুওয়াটার, রাষ্ট্রপতির বাসভবন শীতলনিবাস, উপ-রাষ্ট্রপতির বাসভবন লাইনচৌর, সিংহদুরবার, মহারাজগঞ্জসহ সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। জেলা কর্মকর্তা ছাবিলাল রিজাল স্থানীয় প্রশাসন আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী কারফিউ জারি করার নির্দেশ দেন। কারফিউ জারি থাকবে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। ওই সময়ে কোনোরকম জনসমাগম, অবরোধ বা মিছিল করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নিজের শহরেও পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। অনেক মানুষ জখম হয়েছেন সেখানেও।