স্বামী জিয়াউরের পাশে সমাধিস্থ করা হল খালেদা জিয়াকে

যতদূর চোখ যায় শুধুই কালো মাথা। শেষ কোনও জননেতার শেষকৃত্যে এত জনজোয়ার দেখা যায়নি। বিপুল জনজোয়ারের মধ্যেই শেষ বিদায় জানানো হল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। বুধবার দুপুর ৩টে ৩ মিনিটে খালেদার জানাজা শুরু হয়। শেষ হয় ৩টে ৫ মিনিটে। বিএনপি নেত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা খালেদার পুত্র তারেক রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রমুখ।

ছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের সংসদের স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিক, ভুটানের বিদেশ মন্ত্রী ডিএন ধুংগিয়েল, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ও উচ্চশিক্ষামন্ত্রী আলি হায়দার আহমেদ এবং নেপাল সরকারের একজন প্রতিনিধি। খালেদার মৃত্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন।

বেলা ৩টে পর্যন্ত তিলধারণের জায়গা ছিল না ঢাকার সংসদ ভবন চত্বরে। জানাজা শেষে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে খালেদার মরদেহ সংসদ ভবন থেকে মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জিয়া উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমানের পাশে সমাধিস্থ করা হয়। সকাল ১১টা নাগাদ জিয়ার মরদেহ গুলশানের বাড়ি থেকে বের হয়। এর পর বেলা ১২টা নাগাদ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িতে করে তাঁর মরদেহ ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে নিয়ে যাওয়া হয়।


এদিন বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র গন্তব্য ছিল মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। কেউ এসেছিলেন খুলনা থেকে, কেউ আবার ঢাকা শহরতলির মহাখালি থেকে। বেলা ৩টে পর্যন্ত মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের আশপাশ, বিজয় সরণি, খামার বাড়ি, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, শাহবাগ, মহম্মদপুর প্রভৃতি এলাকায় লোকের ঢল নেমেছিল। ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবন মাঠ এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের চারপাশের রাস্তায় ভিড় সামাল দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঢাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করা হয়েছিল।

ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে বুধবার শেষকৃত্যে ছিলেন জয়শঙ্কর। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বাশারে বাংলাদেশ বায়ুসেনার ঘাঁটিতে নামেন তিনি। তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের সচিব এম ফরহদ হোসেন। এর পর ঢাকার সংসদ ভবনে খালেদা-পুত্র তারেকের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে ভারতের শোকবার্তা তুলে দেন জয়শঙ্কর।

‌মঙ্গলবার খালেদের মৃত্যু সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই শোকবার্তা জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা। তাঁর পুত্র জয়ও পৃথক এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেন। তাঁর পরিবার ও পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদার অবদানের কথা স্মরণ করেন বাংলাদেশের আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা।

বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজা বা বিদায় সমাবেশে যোগদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হাসিনার আওয়ামী লীগ। নেতাকর্মীদের দেখামাত্র গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছে ইউনূস সরকার। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার জানাজায় শেখ হাসিনা থাকার নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা।

প্রশাসনের শীর্ষ মহলেও এই বার্তাটি পৌঁছনো হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রশাসনের তরফে কিছুই জানানো হয়নি। মারধর এবং গ্রেপ্তারের আশঙ্কা উপেক্ষা করেও তাঁরা যোগ দিতে চেয়েছিলেন খালেদা জিয়ার জানাজায়। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জানাজায় যোগ দিতে পারেননি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। বাংলাদেশে শেষ হল রাজনীতির একটি অধ্যায়ের। আর তার সাক্ষী ও চির প্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগ হাজির থাকতে পারল না শেষ বিদায় জানাতে।