গাজা দখলের সিদ্ধান্তে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে ইজরায়েলের মন্ত্রিসভা। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ফের বাড়ছে উত্তেজনা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে অন্তত ২০টি মুসলিম প্রধান দেশ। এই পদক্ষেপকে তারা ‘বিপজ্জনক, উসকানিমূলক এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
ইজরায়েলের দাবি, গাজা দখলের উদ্দেশ্য হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা এবং অঞ্চলটিতে একটি শান্তিপূর্ণ বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য গাজা দখল নয়, বরং সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করা এবং সেখানে একটি স্থায়ী শান্তির পরিবেশ গড়ে তোলা।’ তবে এই সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক টানাপড়েন। মুসলিম দেশগুলোর তরফে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘গাজার ওপর একতরফা দখল মেনে নেওয়া যায় না। এটি শুধুমাত্র অবৈধ দখলদারিত্বকে বৈধ করার একটি অন্যায় প্রচেষ্টা।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে – সৌদি আরব, মিশর, তুরস্ক, কাতার, জর্ডন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া সহ বহু দেশ। তুরস্কের বিদেশমন্ত্রী হাকান ফিদান মিশরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, ‘এই ঘৃণ্য পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলির উচিত একসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করা।’ তিনি ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-র জরুরি বৈঠকের আহ্বানও জানান।
এদিকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই পদক্ষেপকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপ গাজার মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করবে, বিপন্ন করবে পণবন্দিদের জীবন এবং বাস্তুচ্যুত করবে লক্ষাধিক মানুষকে।’ দুই আঞ্চলিক শক্তি সৌদি আরব ও মিশর এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে। তারা এটিকে প্যালেস্টিনীয়দের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে।
রিয়াধ জানিয়েছে, ‘প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না দিলে ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়।’
গত ৮ আগস্ট, ইজরায়েলের নিরাপত্তা ক্যাবিনেট গাজা দখলের পক্ষে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়। ইজরায়েলি বাহিনীর দাবি, গাজার গুরুত্বপূর্ণ অংশে এখনও হামাসের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এর ফলে গাজায় নতুন করে সামরিক অভিযান শুরুর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইতিমধ্যে গাজায় হাজার হাজার পরিবার নিরাপত্তার অভাবে স্থানত্যাগ করেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলিও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, যে কোনও বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপের ফলে গাজার পরিস্থিতি চরম বিপর্যয়ের দিকে যেতে পারে। গাজা দখল নিয়ে ইজরায়েলের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ, রাষ্ট্রসঙ্ঘের উদ্বেগ এবং মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এক সংকটজনক মোড় নিয়েছে।