গাজার তিন অঞ্চলে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা ইজরায়েলের

রক্তপাত, ক্ষুধা ও ধ্বংসের মধ্যেই গাজার তিনটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সাময়িক যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল ইজরায়েল। রবিবার সকালে তেল আভিভ জানিয়েছে, গাজার আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা সিটিতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত।

ইজরায়েলের সেনা বাহিনীর দাবি, এই পদক্ষেপের একমাত্র উদ্দেশ্য গাজার সাধারণ মানুষকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি সহজ ও নিরাপদ করা। একই সঙ্গে, রবিবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রাষ্ট্রসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলিকে সুরক্ষিতভাবে ত্রাণ সরবরাহ করার জন্য একটি ‘নিরাপদ করিডর’ চালুর কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে গাজার বাসিন্দারা এবং আন্তর্জাতিক মহল এই ঘোষণাকে সন্দেহের চোখেই দেখছে। কারণ, এর আগের দিনই গাজায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৭১ জন, যাঁদের মধ্যে ৪২ জন ছিলেন ত্রাণ সংগ্রহ করতে আসা সাধারণ মানুষ। একই দিনে অনাহারে মারা গিয়েছেন আরও পাঁচজন। রবিবার ভোরেও প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫ প্যালেস্তিনীয়।


রাষ্ট্রসঙ্ঘের হিসাব অনুযায়ী, মে মাস থেকে এই পর্যন্ত গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন হাজারের বেশি মানুষ। ভয়াবহ খাদ্যসংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ২০ লক্ষেরও বেশি প্যালেস্তিনীয়। ত্রাণশিবিরগুলিই তাঁদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে, কিন্তু সেখানেও নিরাপদ নন তাঁরা। অভিযোগ, বারবার ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালাচ্ছে ইজরায়েলি সেনা।

এই পরিস্থিতিকে ‘অভূতপূর্ব মানবিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তাঁর কথায়, ‘গাজা আজ এমন মৃত্যু ও ধ্বংসের স্তরে পৌঁছেছে, যার ইতিহাসে তুলনা মেলা দুষ্কর।’

বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক চাপ এবং তীব্র সমালোচনার মুখে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে ইজরায়েল। যদিও আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহের উদ্যোগে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা ইজরায়েলের মানবিক প্রচেষ্টার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এই মুহূর্তে গাজার মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কার্যকর, নিরাপদ এবং ধারাবাহিক ত্রাণ সরবরাহ। সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে শুধুমাত্র প্রতীকী পদক্ষেপ না রেখে বাস্তবে রূপায়ণ করাই এখন ইজরায়েলের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।