ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সদর দপ্তরে হামলা চালালো ইজরায়েল, এবার কি লক্ষ্য অস্ত্র কারখানা?

ইরানের রাজধানী তেহরানে জ্বলছে আগুন।

ইরানে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইজরায়েল। ফের সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সদর দপ্তরে হামলা চালালো নেতানিয়াহুর সেনাবাহিনী। ইরান নিশ্চিত করেছে এই হামলার কথা। ইরানের প্রতিরক্ষা দপ্তরটি রয়েছে সে দেশের ইসফাহানে। তবে এই ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ইরান। রবিবার এই হামলার আগে ইরান জানিয়েছিল, ইজরায়েলের হামলায় তাঁদের দেশে ৭৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০০ জন।

এদিকে ইজরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরানের হামলায় তাদের দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। আহত ৪০০ জন। তবে তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত ৯জন। শুক্রবার রাত থেকে ইরান ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি ইজরায়েলের।

যদিও এর আগে ইরান জানিয়েছিল, প্রয়োজন হলে আমেরিকা ও ব্রিটেনের উপরেও তারা আঘাত হানবে। কারণ ওই দুই দেশ ইজরায়েলকে সমর্থন জানাচ্ছে বলে তাদের কাছে খবর ছিল। কিন্তু রবিবার তেহরান থেকে ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন যে, ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষকে পশ্চিম এশিয়ার বা অন্য দেশে ছড়াতে চায় না ইরান। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বাধ্য করা না হলে এই সংঘর্ষকে পশ্চিম এশিয়ার অন্য দেশগুলিকে আমরা ছড়াতে চায় না।’ তিনি একথাও মনে করেন যে, কোনও আলোচনাতেই বসতে চায় না ইজরায়েল।


অন্যদিকে, ইরানের অস্ত্র উৎপাদন কারখানার কাছে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁদের সরে যেতে বলল ইজরায়েল। রবিবার ইজরায়েলি সেনার মুখপাত্র এক্স হ্যান্ডলে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, ইরানের পরমাণু কেন্দ্রের পরে কি সে দেশের অস্ত্র ভান্ডার লক্ষ্য করে হামলা চালাবে ইজরায়েল? ইজরায়েলের প্রশাসনের সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইরানের উপর চাপ বৃদ্ধি করতেই সে দেশের নাগরিকদের সরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাটজ এক বিবৃতি বলেছেন, ইরানের স্বৈরাচারী শাসক তেহরানকে বেইরুটে পরিণত করছেন।’ অর্থাৎ ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খামেনেই তেহরানকে সিরিয়ার রাজধানীতে পরিণত করছেন। তিনি আরও বলেন, নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে খামেনেই তেহরানের নাগরিকদের পণবন্দিতে পরিণত করেছেন।

ইজরায়েল হামলায় ইরানের চার শীর্ষ সেনাকর্তা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইজরায়েল। ওই নিহত সেনাকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল মহম্মদ বাগেরি। ইজরায়েল আরও জানিয়েছে, ইরানের মোট ন’জন পরমাণু বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ নিহত হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে নীরব রয়েছে তেহরান। এখনও পর্যন্ত ইজরায়েলের হামলায় ইরানের কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তেহরানের সংবাদমাধ্যম এবং ইরান সরকারও এ বিষয়ে তা নিয়ে মুখ খোলেনি।

তবে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক হারযোগ রবিবার ইজরায়েলের নিহতদের জন্য শোকপ্রকাশ করেছেন এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। রবিবার সকালে তিনি বলেন, ‘এই সকাল খুব দুঃখের এবং কঠিন।’

শুক্রবার সকাল থেকে ইরানে হামলা শুরু করেছে ইজরায়েল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, এ ব্যাপারে তাঁদের কিছু করার ছিল না। কিন্তু ইরান আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে হুঁশিয়ারি দেওয়ায় এবার ট্রাম্পও ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, তাঁদের উপর ইরান কোনওভাবে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে তছনছ করে দেওয়া হবে ইরানকে। তবে এই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা করানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।