তোষাখানা মামলায় ১৭ বছর সাজা, পাকিস্তান জুড়ে প্রতিবাদের ডাক ইমরানের

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

তোষাখানা–২ দুর্নীতি মামলায় আদালতের দেওয়া ১৭ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের পরই দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিলেন জেলবন্দি প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শনিবার তাঁকে ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে দীর্ঘ কারাবাসের সাজা শোনানোর পর থেকেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সেই আবহেই মধ্যরাতে সমাজমাধ্যমে একটি বার্তায় ইমরান জানান, তাঁর অধিকারের লড়াই থামবে না এবং এই রায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে হবে।

ইমরানের বার্তায় বলা হয়, ‘খাইবার পাখতুখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহেল আফ্রিদিকে প্রতিবাদ কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছি। গোটা দেশ নিজেদের অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলুক।’ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ‘পাকিস্তানের প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনে বলিদান দিতেও আমি প্রস্তুত।’ এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই তাঁর সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দি রয়েছেন ইমরান খান। জেলবন্দি অবস্থায় তিনি কীভাবে সমাজমাধ্যমে এই বার্তা দিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের মতে, ইমরানের বক্তব্য তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ পোস্ট করেছেন। যদিও ইমরানের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এই বার্তা তাঁরই অনুমোদিত।


কারাদণ্ডের রায় প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, ‘১৭ বছরের সাজা আমাকে অবাক করেনি। কোনও প্রমাণ ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তাঁর আইনজীবীরাও জানিয়েছেন, আইনি পথেই এই সাজাকে চ্যালেঞ্জ করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই একের পর এক মামলায় জড়িয়েছেন ইমরান। তোষাখানা দুর্নীতি মামলার সূত্রপাত হয় এক বিদেশি ব্যবসায়ীর অভিযোগ থেকে। দুবাইয়ের ওই ব্যবসায়ীর দাবি, বিদেশ থেকে পাওয়া একটি দামি ঘড়ি তিনি ইমরানের কাছ থেকে প্রায় ২০ লক্ষ ডলারে কিনেছিলেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সৌদি আরবের রাজা মহম্মদ বিন সলমন ইমরানকে ওই ঘড়িটি উপহার দিয়েছিলেন, যা নিয়ম মেনে রাষ্ট্রীয় তোষাখানায় জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা গোপন রেখে বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন আগে ইমরানকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পরে তোষাখানা দুর্নীতি–২ মামলায় ২১ জন সাক্ষীর বয়ান গ্রহণের পর আদালত রায় ঘোষণা করে। রায় ঘোষণার সময় বিচারক জানান, ইমরানের বয়স এবং বুশরা বিবি মহিলা হওয়ায় তাঁদের সাজা ‘লঘু’ করা হয়েছে। তবু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী— দু’জনকেই ১৭ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাকিস্তানি টাকায় এক কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

এই রায়ের পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা বাড়ছে। ইমরানের ডাকে আদৌ দেশে কতটা বড় প্রতিবাদ গড়ে ওঠে, সেদিকেই এখন তাকিয়ে গোটা দেশ।