ইনকিলাব মঞ্চের টার্গেটে এবার বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়রা। হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবির পাশাপাশি ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের দাবি জানালো তাঁরা। সেই সঙ্গে ইউনূস সরকারকে বেঁধে দেওয়া হল চূড়ান্ত সময়সীমা। মোট চারদফা দাবি পূরণের জন্য ইউনূসের তদারকী সরকারকে ২৪ দিনের চরমসীমা বেঁধে দিয়েছে হাদির ইনকিলাব মঞ্চ।
বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী, রবিবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ ঢাকার শাহবাগ চত্বরে ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ কর্মসূচি করে ইনকিলাব মঞ্চ। সেখান থেকে মোট ৪ দফা দাবি তোলা হয়। তার মধ্যে দু’টি আবার ভারত সম্পর্কিত। মঞ্চের প্রধান দাবি হাদির খুনি এবং হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত প্রত্যেককে বিচারের অধীনে আনতে হবে। ভারত সম্পর্কিত প্রথম দাবিটি হল, বাংলাদেশে কর্মরত সমস্ত ভারতীদের কাজের অনুমতি বাতিল করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে এই পদক্ষেপ জরুরি বলে দাবি করেছে ইনকিলাব মঞ্চ।
অন্যটি হল ভারতে থাকা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতাদের ফেরত না দিলে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। ইনকিলাব মঞ্চের সর্বশেষ দাবি হল বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে থেকে যাঁরা পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন, তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। আগামী ২৪ দিনের মধ্যে সমস্ত দাবি পূরণ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। নাহলে বড়সড় আন্দোলনে নামবে বলে জানিয়েছে হাদির সংগঠন।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের জানিয়েছেন, ‘এই চার দফা দাবির মধ্যে আগামী ২৪ দিনের মধ্যে শহিদ ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচার সম্পন্ন করা আমাদের প্রধান দাবি। বাকি তিন দাবিও এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই নিশ্চিত করতে হবে।‘ রবিবার রাতেই ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানায় ইনকিলাব মঞ্চ। একই সঙ্গে সংগঠনটির তরফে জানানো হয়েছে, ‘বিচার’ না-হওয়া পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যাবে।
ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে গত শুক্রবার দুপুর থেকে শাহবাগে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা–কর্মীরা। শনিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের সর্বত্র আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার ডাক দেন।
এই ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার বেলা দুটো থেকে ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়। এতে শাহবাগ মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে অ্যাম্বুল্যান্স-সহ জরুরি পরিষেবার গাড়িগুলোকে চলাচল করতে দেওয়া হয়। টানা কর্মসূচির তৃতীয় দিনে সাউথইস্ট, উত্তরা, বিজিএমইএ, বিইউএফটিসহ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগের এই অবরোধে অংশ নেন। এ ছাড়া এদিন উত্তরার বিএনএস টাওয়ারের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন হাদি। সরকারি উদ্যোগে তাঁকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ছ’দিন পর ১৮ ডিসেম্বর রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরেই বাংলাদেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য এবং হাদির সমর্থকেরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। একাধিক সরকারি ও সাংস্কৃতিক ভবন, সংবাদপত্রের দপ্তরে তাণ্ডব চালানো হয়।
হাদির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে অনেককে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তবে মূল হত্যাকারী ফয়সাল করিম এবং তাঁর প্রধান আলমগীর শেখের খোঁজ মেলেনি। এদিকে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে হাদির হত্যাকারীরা মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইউনূসের পুলিশ। যদিও সে দাবি স্পষ্টভাষায় খারিজ করে দিয়েছে বিএসএফ ও মেঘালয় পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে হাদি হত্যায় বাংলাদেশ সরকারকে চরমসীমা দিয়ে দিল ইনকিলাব মঞ্চ।