ভোট বানচাল করার জন্য হাদিকে খুন, ইউনূস সরকারকে নিশানা হাদির দাদার

গত বৃহস্পতিবার রাত দশটা নাগাদ মারা যান বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মুখ তথা ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। তারপর থেকেই অশান্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। একাধিক জায়গায় ভাঙচুর চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ, Rab নামায় ইউনূস সরকার। এখনও বাংলাদেশের পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। তার মধ্যেই গুরুতর অভিযোগ করলেন নিহত হাদির দাদা শরিফ ওমর বিন হাদি।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন। দেশের ভোট ভেস্তে দিতেই শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর দাদা ওমর। তিনি সরাসরি আঙুল তুলেছেন বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের একাংশের দিকে। এই খুনের দায় বর্তমান প্রশাসন এড়াতে পারে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ওমর বলেন, ‘যে সময়ে আমার ভাইকে খুন করা হল, তখন ক্ষমতায় অন্তর্বর্তী সরকার। তাই নিরাপত্তা ব্যর্থতার দায় তাদেরই নিতে হবে। বিচার একদিন হবেই।‘ হাদির মৃত্যু ছিল পরিকল্পিত। নির্বাচন বানচাল করতেই তাঁকে টার্গেট করা হয়েছে বলে দাবি ওমরের। সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই নির্বাচন প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিল। ওকে খুন করে এখন সেই ঘটনাকেই ইস্যু বানিয়ে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা সরাসরি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা।‘


হাদির হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবিও তুলেছেন দাদা ওমর। তিনি বলেন, ‘ওসমান হাদি শহিদ হয়েছে আজ ষষ্ঠ দিন। সরকার পদক্ষেপ করার বিষয়ে কোনও অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। সরকারের কাছে দাবি জানাই, হাদির খুনিচক্রকে জাতির সামনে তুলে ধরুন।’

এখানেই থেমে থাকেননি ওমর। তিনি হুঁশিয়ারির সুরে বলেন,‘একটা কথা মনে রাখবেন, বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনের আগে যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, যাঁরা রাষ্ট্রকে নিজেদের মনে করতেন, তাঁরা আজ আর বাংলাদেশে নেই। তাঁরা পালাতে বাধ্য হয়েছেন। ওসমান হাদির খুনের বিচার না হলে আপনারাও একদিন দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হবেন।’

ওমর বলেন, ‘ আপনারা যখন ক্ষমতায়, তখন ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার দায় আপনারা এড়াতে পারবেন না। আপনাদেরও বিচার হবে। আজ হোক, ১০ বছর পরে হোক, বিচারের কাঠগড়ায় আপনাদের দাঁড়াতেই হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে অনুরোধ করব, দ্রুত খুনিদের আমাদের সামনে নিয়ে আসুন। নির্বাচনের পরিবেশ যাতে বিঘ্নিত না হয়, খুনির বিচার করুন।’ এর পরে হাদির খুনে ওমর সরাসরি আঙুল তুলেছেন ইউনূস সরকারের দিকে। তিনি বলেন, ‘আপনারাই ওসমান হাদিকে হত্যা করিয়েছেন, আবার আপনারাই এটাকে ইস্যু করে নির্বাচন ভেস্তে দিতে চাইছেন, তা আমরা কখনওই হতে দেব না।’ তিনি জানিয়েছেন, হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হলে তাঁরা পথ ছাড়বেন না।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় ভোটের প্রচার চলাকালীন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা হাদির মাথায় গুলি করে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছয় দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান ওসমান হাদি।

হাদির মৃত্যুর খবর ছড়াতেই বাংলাদেশের একাধিক এলাকায় শুরু হয় বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অশান্তি। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিরাপত্তা জোরদার করে প্রশাসন। শনিবার ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের কাছেই হাদিকে দাফন করা হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন লক্ষাধিক মানুষ।

হাদির মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক  ঘোষণা করেছে ইউনূস সরকার। তবে এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে  ওসমান হাদি কি কোনও রাজনৈতিক সংহিংসতার শিকার না কি এর পিছনে রয়েছে আরও বড় কোনও চক্রান্ত? বাংলাদেশের রাজনীতির অন্দর মহলে এখন সেই কানাঘুষোই চলছে।