কানাডার দক্ষিণ অন্টারিও প্রদেশে শুরু হয়েছে জি–৭ দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীর শীর্ষ সম্মেলন। বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয়— রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান, গাজায় যুদ্ধবিরতির মার্কিন উদ্যোগ, প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের টানাপোড়েন। বিশ্বের সাতটি প্রভাবশালী দেশ ছাড়াও আমন্ত্রিত হয়েছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো ও ইউক্রেন। ফলে এই বৈঠককে ঘিরে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে আগ্রহ যথেষ্ট বেড়েছে।
মঙ্গলবার ও বুধবার পরপর দুই দিন বিদেশমন্ত্রীদের বরণ করে নিয়েছেন কানাডার বিদেশমন্ত্রী অনিতা আনন্দ। তিনি বলেছেন, ‘বাণিজ্যিক চাপ বা রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও আমাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত রাখতে হবে। সহযোগিতাই স্থিতিশীল ভবিষ্যতের পথ।’
মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের কাছে নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাই সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার।’
বৈঠকে আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু গাজা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে মতভেদ থাকলেও, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় খোঁজাই আলোচনার মূল লক্ষ্য। অনিতা আনন্দ বলেছেন, ‘শান্তি স্থাপন আমাদের আলোচনার প্রথম সারির বিষয়। মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা আজ বৈশ্বিক শান্তির মূল চাবিকাঠি।’
বুধবার ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গেও আলাদা করে বৈঠক বসেন অনিতা। জানা গিয়েছে, ইউক্রেনে শীত শুরু হতেই রাশিয়া নতুন করে আক্রমণ তীব্র করেছে। এর প্রেক্ষিতে ইউক্রেনকে ১৭ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা করেছে ব্রিটেন। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেন, ‘পুতিন শীতের কনকনে ঠান্ডায় ইউক্রেনকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমরা ইউক্রেনের পাশে রয়েছি।’
ব্রিটেনের পাশাপাশি কানাডাও সম্প্রতি ইউক্রেনের জন্য নতুন করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমদানি শুল্ক আরোপে কানাডা–আমেরিকার সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। তার মধ্যেই প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির দাবিতে ট্রাম্প বলেছেন, ন্যাটো সদস্যদের বার্ষিক জিডিপির পাঁচ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করতে হবে। কানাডা ও ইতালি সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। অনিতা জানিয়েছেন, ‘আমরা ২০৩৫ সালের মধ্যে জিডিপির পাঁচ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয়ে পৌঁছব।’
এদিকে গাজা নিয়েও জি–৭ সদস্যদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। ব্রিটেন, কানাডা ও ফ্রান্স ঘোষণা করেছে, তারা শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলেও প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। অন্যদিকে, আমেরিকা ও জার্মানি আপাতত যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনাতেই জোর দিচ্ছে। বিশ্ব কূটনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন তাই এখন হয়ে উঠেছে নতুন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। দক্ষিণ অন্টারিওর বৈঠক শেষ হলে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরবর্তী দিশা অনেকটাই নির্ভর করবে এখানকার আলোচনার ফলাফলের উপর।