ডিজে থেকে ‘যুবনেতা’, নেপালের বিদ্রোহের নতুন মুখ সুদান গুরুং

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

নেপালের চলতি যুব-বিদ্রোহের মুখ হয়ে উঠেছেন সুদান গুরুং। বয়স মাত্র ছত্রিশ বছর। তিনি কখনও ‘ডিজে’, কখনও সমাজকর্মী। সেই সুদানই এখন উত্তাল আন্দোলনের নেতৃত্বে। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে স্কুল-কলেজের ছাত্র-যুবদের সামনের সারিতে নামানোর নেপথ্যে রয়েছেন তিনি। নেপালের সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাঁর হাত ধরেই তৈরি হচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ছাত্র-যুব সমাজের নতুন রাজনৈতিক অভিঘাত।

জানা গিয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে ‘হামি নেপাল’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালাচ্ছেন সুদান। ভূমিকম্পে সন্তান হারানোর পর থেকেই সমাজসেবায় ঝুঁকে পড়েন তিনি। প্রান্তিক এলাকায় শিক্ষার প্রসারই হল সংগঠনের মূল লক্ষ্য। ত্রাণ থেকে শুরু করে বিপর্যয় মোকাবিলা, নানা ক্ষেত্রে হাতে-কলমে কাজ করায় স্থানীয় স্তরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সুদান।

তাঁর অতীতও কম রঙিন নয়। একসময় ডিজে হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পার্টি আর অনুষ্ঠানে সুরের তালে জমিয়ে রাখতেন দর্শকদের। তবে ব্যক্তিগত জীবনের আঘাত তাঁকে নতুন পথে ঠেলে দেয়। ক্রমে ছাত্র-যুব সমাজের কাছে ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন সুদান।


বিপি কৈরালা ইনস্টিটিউটে দুর্নীতির প্রতিবাদে ঘোপা ক্যাম্প আন্দোলনেও ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক প্রতিরোধের যাত্রা। বর্তমান বিক্ষোভে ফের উঠে এসেছে তাঁর নাম। সমাজমাধ্যমের দক্ষ ব্যবহারকারী সুদান নিজের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন যুব সমাজের কাছে।

আন্দোলনকারীরা নিজেদের ‘জেন জি’ পরিচয়ে তুলে ধরছেন। সরকারের বিরুদ্ধে শুধু ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-সহ ২৬টি সমাজমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা নয়, বাড়তে থাকা দুর্নীতি, আর্থিক বৈষম্য এবং স্বজনপোষণের অভিযোগও তুলছে ছাত্র-যুবরা। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিকে নিশানা করে মঙ্গলবার কাঠমান্ডুর রাস্তায় শোনা গিয়েছে স্লোগান— ‘কেপি চোর, গদি ছোড়’।

সেই ডিজে সুদান এখন কার্যত বিদ্রোহের ‘সাউন্ডট্র্যাক’। তাঁর প্রতিবাদী গানের তালে মেতে উঠছে তরুণ প্রজন্ম। টিকটকের মতো অ্যাপে ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলনের স্লোগান, ভিডিও আর সংগঠনের বার্তা। যে প্ল্যাটফর্মগুলি নিষেধাজ্ঞার বাইরে রয়েছে, সেগুলির মাধ্যমেই একে অপরের সঙ্গে যোগ রাখছে আন্দোলনকারীরা।

সুদান অহিংস আন্দোলনের কথা বললেও বাস্তবে তা ক্রমেই সহিংস হচ্ছে। প্রেসিডেন্টের বাসভবন, সরকারি দপ্তর— কোথাও বিক্ষোভকারীদের হামলা এড়ানো যায়নি।