মার্কিন বিমুখতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কমছে বিদেশি পড়ুয়া, আয় কমায় ফাঁপরে আমেরিকা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসেই একের পর এক নতুন নিয়ম চালু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিবাসী নীতিতে বদল এনেছেন। পরিবর্তন করা হয়েছে ভিসা নীতিতেও। এতে আমেরিকায় বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশি পড়ুয়ারাও বিপদে পড়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় যেতে ভয় পাচ্ছেন বিদেশি পড়ুয়ারা। হাতে বিকল্প থাকলে আমেরিকাকে এড়িয়ে যেতে চাইছেন তাঁরা। এর ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর  মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিদেশি পড়ুয়া তুলনায় কম ভর্তি হয়েছেন।

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আয়ের একটা বড় উৎসই হল বিদেশি পড়ুয়াদের থেকে প্রাপ্ত অর্থ। বিদেশি মুদ্রার পাশাপাশি ডলারেও প্রচুর আয় করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। বিদেশি পড়ুয়ারা এতোদিন আমেরিকায় বাড়তি সুযোগসুবিধা পেতেন। বিভিন্ন গবেষণায় মার্কিন বিনিয়োগ বিদেশিদের আরও বেশি করে আকৃষ্ট করত। তবে ট্রাম্প কুর্সিতে বসার পরেই ছবিটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। বিদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা দিন দিন কমছে। ফলে ফাঁপরে পড়েছে আমেরিকার বিভিন্ন নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। শিকাগোর ডিপল ইউনিভার্সিটি ইতিমধ্যে খরচে কাটছাঁট করার কথা জানিয়েছে। এ বছর সেখানে আগের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম বিদেশি পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন। গত বছরে ডিপলে মোট ২১ হাজার ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২৫০০ জনই ছিলেন বিদেশি।

অন্যদিকে, শিকাগোর ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা কমেছে প্রায় ৭৫৫ জন। ডিপল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যানুয়েল জানিয়েছেন, বিদেশিদের ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে। অনেকের ভিসা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। নতুন ভিসার আবেদন মঞ্জুরেও বেশি সময় লাগছে। সম্প্রতি আমেরিকার বিদেশ দপ্তর নতুন ফতোয়া জারি করেছে। বিদেশি পড়ুয়াদের সমাজমাধ্যমের খুঁটিনাটি জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  সেই সব তথ্য ঘেঁটে দেখতে চাইছেন মার্কিন আধিকারিকরা। আমেরিকা সম্পর্কে কার কী মনোভাব তা বুঝতে এই পরিকল্পনা বলে মনে করা হচ্ছে। তারপর সেই অনুযায়ী পড়ুয়াদের চিহ্নিত করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই নতুন নিয়মের কথা শুনেও অনেক পড়ুয়ারা আমেরিকা পড়তে যেতে চাইছেন না।


গত মে মাসে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি পড়ুয়া ভর্তি নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। কোনও বিদেশি পড়ুয়াকে ভর্তি নেওয়া যাবে না বলে জানায় ট্রাম্প সরকার। ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষ এবং জাতিগত হয়রানির মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে তাঁর এই পদক্ষেপও বিদেশি পড়ুয়াদের মন বদলের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পড়ুয়ারা আমেরিকার বিকল্প খুঁজছেন মত ওয়াকিবহাল মহলের।

ট্রাম্পের এই নতুন নীতির ফলে একগুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাজেটে কাটছাঁট করতে হয়েছে। মোট ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে। জন্‌স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে গত মার্চ মাসে দু’হাজারের বেশি কর্মীছাঁটাই হয়েছিল। গবেষণার কাজে বরাদ্দ থেকে ৭.১ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে খবর। নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪২৫টি পদ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ৬৩০ জন কর্মচারীকে। প্রতি ক্ষেত্রেই অর্থের ঘাটতিকে কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছে বিদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়া।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে এক ভারতীয় ছাত্রী জানিয়েছেন, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও পড়তে যাননি। ভিসার জটিলতা হতে পারে ভেবে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন। তাই অন্যত্র যাবেন বলে ভাবছেন ওই ছাত্রী। ২০২৪ সালে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন এক চিনা ছাত্র। পরে তাঁকে গবেষণার সুযোগ দেওয়া হয়। তিনি আমেরিকার বদলে ব্রিটেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অধ্যাপকেরাও ছাত্রছাত্রীদের আমেরিকা ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বলে একাংশের মত।

নির্বাচনী প্রচারেই ট্রাম্প অভিবাসন এবং ভিসা নিয়ে নতুন পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছিলেন। আমেরিকায় চাকরি এবং শিক্ষায় মার্কিনদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। বিদেশিদের জন্য চাকরি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিকদের সমস্যায় পড়ার কথা তুলে ধরা হয়। তাই এই নীতি বদল। আর এই বদলেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে।