হাসিনা প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করল বিদেশসচিব বিক্রম মিসরী

ভারতের ‘রাজনৈতিক আশ্রয়ে’ রয়েছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় দেড় বছর হল ভারতে ‘আশ্রয়ে’ রয়েছেন তিনি। ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর  ভারতে চলে আসেন মুজিবকন্যা। তারপর থেকে ভারতেই ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ আছেন হাসিনা। এদিকে বাংলাদেশে গণহত্যা মামলায় বিচার চলছে মুজিবকন্যার। এই পরিস্থিতিতে আগেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য নয়াদিল্লির কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল। তাতে কর্ণপাত করেনি ভারতের বিদেশমন্ত্রক।

তবে এবার হাসিনা নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারতের বিদেশমন্ত্রক। সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিদেশসচিব বিক্রম মিসরী জানান, ‘এটি একটি বিচার বিভাগীয় এবং আইনি প্রক্রিয়া। এর জন্য দু’দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা এবং পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে।‘ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং এই বিষয়গুলি নিয়ে আমরা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও একসঙ্গে কাজ করার জন্য তৈরি। এই মুহূর্তে এর বাইরে আর কোনও মন্তব্য করা গঠনমূলক বলে আমি মনে করি না।‘

সোমবার দিল্লিতে বাংলাদেশ থেকে আসা সাংবাদিকদের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করেন মিসরী। তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময়েই হাসিনার প্রসঙ্গ ওঠে। এ ছাড়া বাংলাদেশ এবং ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়েও আলোচনা হয়। আগামী বছরেই বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন রয়েছে। ছাব্বিশের ফেব্রুয়ারিতে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। সে বিষয়েও সোমবার নয়াদিল্লির অবস্থান স্পষ্ট করে দেন বিক্রম মিসরী। তিনি জানান, সাধারণ মানুষের দ্বারা নির্বাচিত বাংলাদেশের যে কোনও সরকারের সঙ্গেই কাজ করার জন্য ভারত প্রস্তুত।


তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে দিল্লি। ভারত চায় যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে এই নির্বাচন আয়োজন করা হোক। প্রত্যেক নাগরিক যেন নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পায়।  তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যে নিজে থেকেই এই নির্বাচনের একটি সময়সীমার কথা বলেছেন, তা আমাদের ভাল লেগেছে। এই নির্বাচন আয়োজিত হওয়ার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব।‘

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনের জেরে গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন সে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। পতন হয় তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সরকারের। বাংলাদেশ ছাড়েন হাসিনা এবং সাময়িক ভাবে আশ্রয় নেন ভারতে। তার পর থেকেই ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে এক কূটনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও তার প্রভাব পড়েছে। যদিও এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে মিসরী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কিছু সিদ্ধান্তের কারণেই বাণিজ্যে এই প্রভাব পড়েছে।  গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি এবং তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য প্রস্তুত ভারত।

আজ মঙ্গলবার একটি আন্তর্জাতিক  সংবাদ মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের শীতলতার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় তারেককে। প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হলে সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। ভারতের সঙ্গে শীতলতার বিষয়টি বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারেক আরও বলেন, আমাকে আমার দেশের মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে।